প্রতিনিধি ৫ মে ২০২০ , ২:২৭:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক :-
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) ১০নং ওয়ার্ডে বিশেষ সহায়তা ওএমএস কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করে কার্ড বিতরণ ও একই পরিবারে একাধিক কার্ড দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
অভিযোগে উঠে এসেছে এক তলা, ২তলা ভবনের মালিকসহ, লক্ষ লক্ষ টাকার সুদ ব্যবসায়ী, ঠিকাদার ও বিত্তশালীদের নামে কার্ড দেয়া হয়েছে ।
সূত্রে জানা যায়,করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষনা করায় স্বল্প আয়ের মানুষ যেন খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১০টাকা দরের চাল বিক্রি শুরু করে।
এই বিশেষ সুবিধা দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) সহ অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষ পাবে বলে পরিপত্র জারি করা হয়।
কিন্তু সরকারি এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের তালিকা এককভাবে তৈরি করছেন স্থানীয় কাউন্সিলররা। তারা এই বিশেষ ওএমএস এর তালিকায় সরকারি- আধাসরকারী কর্মচারীদের তালিকাভুক্ত করেছেন। তালিকাভুক্ত হয়েছেন একতলা-২তলা বাড়ির মালিক এবং বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ভোক্তা হিসেবে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে কার্ড বিতরণ দেখানো হয়েছে।
নগরীর ১০নং ওয়ার্ডে অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বসবাস রয়েছে।বিসিসির ওয়ার্ডগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) একজনের নামও এই তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে চায়ের দোকানি, রিক্সাচালক, খাবার হোটেল কর্মচারী, আয়া, ভিক্ষুকসহ নেই দিনমজুদের নাম।
স্থানীয় বাসিন্দা হনুফা বেগম ও তার স্বামী রাজা মিয়া বরিশাল নিউজ২৪কে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বিশেষ ওএসএম কার্ড আনতে কাউন্সিলরের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমাদের কার্ড দেয়নি। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে খাই আমার স্বামী রাজা মিয়া পঙ্গু পরিবারে সংসারে ৪জন লোক কোন রকম বেঁচে আছি। তারপর ও সরকারে দেয়া একটি ওএসএম কার্ড আমরা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় যাদের টাকা, বাড়ি, গাড়ি আছে তাদের কার্ড দেয়া হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ড অফিসের এক কর্মচারী জানান, সময়ের অভাবে একই তালিকার ১০/ ১৫ টি নাম পরিবর্তন করে সরকারি ত্রাণ, এনজিও’ র ত্রাণ এমনকি ১০টাকার চালের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের নির্দেশ মতে।
কার্ড বিতরণে কাউন্সিলর ও ওয়ার্ডের আ-লীগের নেতৃবৃন্দরা সরকারি কোন নিয়ম কানুন মানছে না। তাদের পছন্দের লোকদেরই বারবার বিভিন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলেন, যেখানে আমাদের কিছু বলার বা করার থাকে না।
এ বিষয় জানতে , বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসার তাজুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) একাধীকবার ফোন দিলে তিনি কল রিসিভ করেনি। এজন্য তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক আ-লীগ নেতারা বলেন, তালিকা করেছিলো ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ, তাতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণও সহযোগিতা করেন। কার্ড দেয়ার আগে কাউন্সিলরদের ভালো করে যাচাই করা উচিত ছিলো। কাউন্সিলরা তাদের স্বজনপ্রীতি করে তাদের লোকদের কার্ড বিতরণ করেছেন।
তারা আরও বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সুবিধা ভোগী মানুষের তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা তৈরি করেছে তারাই বলতে পারবে তালিকায় কোন অনিয়ম আছে কিনা।
এদিকে ১০নং ওয়ার্ড সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখর চন্দ্র দাস বলেন, বিশেষ ওএসএম কার্ড তালিকা করতে ১০নং ওয়ার্ডে প্রতিটি ইউনিটিতে ৫/৬জন করে লোক দেয়া হয়েছিলো। তবে সেই সব লোকজন নিজেদের আখের ঘোচাতে স্বজন দেখে ও সম্পর্ক রাখার জন্য বিত্তবানদের নামের তালিকা করেন।
যাদের বিশ্বাস করে তালিকা করতে দেয়া হয়েছে তারাই নিজেদের তালিকা করে নিলেন। আসলে বিষয়টি খুব দুঃখজনক । আমাদের তো আর ওয়ার্ডে সব লোকজন পরিচিত না তাই ইউনিট প্রতি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তার পরেও আমরা ওয়ার্ড ভ্রমন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যারা এই কার্ড পাওয়া যোগ্য তাদের নিজ হাতে দিবো। প্রয়োজন হলে বিত্তবানদের যাচাই করে বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা করবো ইনশাআল্লাহ।
ওএসএম কার্ড বিতরণে অনিয়মের বিষয় বিসিসি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্য নেয়াও সম্ভব হয়নি।
এদিকে কেডিসি কলোনীর বাসিন্দা আঞ্জুমান বলেন, আমি ভাতের হোটেলে কাজ করি। স্বামী ভিক্ষা করেন তার পরও আমাকে একটি কার্ড দেয়নি কাউন্সিলর। কাউন্সিলর তাদের লোকজন দেখে কার্ড দিয়েছে। আমার পরিবারে ৪জন সদস্য একমুঠো ভাত খেতে খুব কষ্ট হয়। যাদের টাকা আছে তারাই ওএসএম কার্ড পেয়েছে।
এ বিষয় ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এটিএম শহিদুল্লাহ কবিরের মুঠোফোনে কল দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আসছি আগামী পর্বে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে।