বরিশালে মাদকাসক্ত আওয়ামী লীগ নেতার হামলায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে ফিরলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইদ মেমন। তবে মাদকাসক্ত ওই নেতার ধারালো অস্ত্রের আঘাত থেকে রেহাই পাননি তিনি। হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।
ঈদের আগের দিন অর্থাৎ গত ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাঢ়ী মহল গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়েম শরীফ এর নিজ বাড়িতে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিক সাইদ মেমনকে বরিশাল নগরীর রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৩ আগস্ট বিকালে তাকে দেখতে যান শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। সাংবাদিক সাইদ মেয়ম বরিশাল থেকে প্রকাশিত আজকের পরিবর্তন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। ইতিপূর্বে তিনি দৈনিক যুগান্তর বরিশাল অফিসের স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক বনিক বার্তা’র প্রতিনিধি, বিডি নিউজ ও দৈনিক মতবাদ সহ বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন।
এদিকে ঘটনার তিন দিনেও হামলাকারী মাদকাসক্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি সায়েম শরীফের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ। বরং মামলা বা অভিযোগের দোহাই দিয়ে সায়েম শরীফকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে কাউনিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।
আহত সাংবাদিক সাইদ মেমন জানান, চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়েম শরীফ সম্পর্কে তার আত্মিয় হয়। সে ইয়াবা সহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য মাস কয়েক পূর্বে তার পরিবার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে প্রেরন করে। কিন্তু সেখানের চিকিৎসাতেও ভালো হননি তিনি।
মেমন বলেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ ১১ আগস্ট সায়েম শরীফ ঘরের নেশা করে পরিবারের লোকেদের ওপর হামলা ও মারধর শুরু করে। পরে সায়েম এর ছোট ভাই সুহাদ আমাকে ওদের বাড়িতে ডেকে নেয়। এসময় সায়েম শরীফ আমাকে তার বাড়িতে দেখা মাত্রই ক্ষুব্দ হয়। ঘরের মধ্যে ডেকে নিয়ে নিজ শয্যা কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায় সাংবাদিক মেমনকে জবাই করে হত্যার পরিকল্পনা করে সায়েম।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সাথে থাকা একটি ধারালো চাকু দিয়ে সাংবাদিক সাইদ মেমনকে এলোপাথারী কোপাতে শুরু করে মাদকাসক্ত সায়েম শরীফ। তাকে প্রতিরোধ করতে সায়ে হাত ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন মেমন। এক পর্যায় তার বাম পায়ে হাটুর উপরে চাকু ঢুকিয়ে দিলে রক্তাক্ত জখম হন মেমন।
মেমন বলেন, সায়েম শরীফের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে তারই মাদকাসক্ত অপর এক সহযোগী কৌশলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এমনকি সেই কৌশলগতভাবে ঘরের দরজা খুলে দিলে আমি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাই। সায়েম শরীফের ওই সহযোগী এগিয়ে না আসলে বেঁচে ফেরা কষ্টকর হয়ে যেত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মেমন।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, একই দিন সকালে মাদকাসক্ত সায়েম শরীফ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পির ওপর হামলা করে। স্ত্রী’র সাথে পরকিয়া এবং অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তাকে বেধড়ক মারধর করে ওই আওয়ামী লীগ নেতা। এছাড়াও প্রত্যহ তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন স্ত্রীও। দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের সাথেও একই আচরন করছে সায়েম। শুধু তাই নয়, ১১ আগস্ট ঘটনার পূর্বে মাদকাসক্ত সায়েমকে নিবৃত করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হন তার মামা আলতাফ মাহমুদ সিকদারও।
স্থানীয়রা বলছেন, সায়েম শরীফ নেতা করতে গিয়ে তার মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে গেছে। ফরে তার আচারন অস্বাভাবিক হয়ে আছে। যে কোন সময় তার মাধ্যমে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি। এমনকি কারোর প্রান হানিও ঘটতে পারে বলে শঙ্কিত তারা। আর এমনটি হলে কাউনিয়া থানা পুলিশকেই সেই দায়ভার নিতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এর কারন উল্লেখ করে তারা অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিক সাইদ মেমন এর উপর হামলার ঘটন তিন দিন অতিবাহিত হলেও মাদকাসক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সায়েম শরীফের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না কাউনিয়া থানার ওসি সায়েমকে ঘটনার দু’দিন পরে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউনিয়া থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, আহত সাংবাদিক সাইদ মেমন এর সাথে আমার কথা হয়েছে। তাকে থানায় মামলা বা লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ দিলেই সায়েম শরীফের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।