প্রতিনিধি ৫ অক্টোবর ২০২০ , ৯:০১:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
গণমাধ্যমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ভুঁইফোড় চক্রের মূলহোতা শাওনকে খুঁজছে পুলিশ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ গণমাধ্যমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিড়ম্বনায় ফেলে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী কতিপয় কিছু হলুদ সাংবাদিকদের রুখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সাংবাদিক সংগঠন ও প্রশাসন। নামসর্বস্ব এসব কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অসাধু চক্রের কার্ড বাণিজ্যে পেশাদারিত্ব রক্ষার্থে বিড়ম্বনায় পড়ছে প্রকৃত সংবাদ শ্রমিকরা। এর ধরাবাহিকতায় সম্প্রতি তালাশ পরিচয় দিয়ে বরিশাল থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার সুনাম ক্ষুন্ন করে নগর দাপিয়ে বেড়ানো একটি ভুঁইফোড় চক্রের সদস্যকে আটক করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। তবে এই চক্রের মূলহোতা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। বর্তমানে তাকেও আইনের আওতায় আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের চৌকস একটি দল। সূত্রে জানা যায়, বরিশাল থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় তথ্যবহুল সংবাদ অনুসন্ধান মাধ্যম দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার সুনাম ক্ষুন্ন করে একটি কথিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী চক্র নগরসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে অর্থ বাণিজ্যে কাজ করছে। শুধু তাই নয় এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে নামসর্বস্ব কার্ড, স্টিকার, নাম-লোগো ব্যবহার করে বরিশাল দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তারা। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন জায়গা থেকে দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার পাঠক, শুভাকাংখীদের বিস্তার অভিযোগ আসতে শুরু করলে পত্রিকার পক্ষ থেকে এই চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত না হবার বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। পাশাপাশি এই চক্রের সদস্যদের কর্মকাণ্ড রোধে কাজ করে পত্রিকার সংবাদ অনুসন্ধান মাধ্যম। যার পরিপেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর নগরীর ডিসি অফিস সংলগ্ন এলাকায় তালাশ পরিচয় দিয়ে অর্থ বাণিজ্য তৎপরতায় লিপ্ত থাকার ঘটনায় এই চক্রের সদস্যদের উপস্থিতি হবার কথা জানতে পারে দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকা কর্তৃপক্ষ। এসময় ঐ এলাকায় উপস্থিত হয়ে এনএনসি তালাশ নামে স্টিকার লোগো সম্বলিত একটি মটরসাইকেল দেখতে পায় তারা। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষমান থেকে সেই মটরসাইকেল’র মালিক মোঃ আরিফ খান নামের একজন সাথে সাক্ষাত হয় দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার কর্তৃপক্ষের সাথে। এসময় তাকে তার মোটরসাইকেলে ব্যবহৃত স্টিকার তালাশ সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে কোন সদুত্তর না দিয়ে দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার উপস্থিত কর্তৃপক্ষের সাথে অ-সৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকে। একপর্যায়ে প্রশাসনকে বিষয়টি নিয়ে অবহিত করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। মোঃ আরিফের ব্যবহৃত তালাশ সম্পর্কে থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। এসময় আরিফ জানায়, সে মূলত কোন সাংবাদিক নয়। আর এনএনসি তালাশ সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তিনি ২ হাজার টাকা বিনিময়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি খাবার হোটেলের মালিক শাওন মোল্লার কাছ থেকে কার্ড গ্রহণ করে। এছাড়া আর কোন কিছুই তার জানা নেই। এসময় উপস্থিত দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার কর্তৃপক্ষের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরকম অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে শাওন মোল্লা টাকার বিনিময়ে এই কার্ড, স্টিকার প্রদান করেন। শুধু তাই নয় মোঃ আরিফকে কোন এক সাংবাদিক সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অধিনস্থ করতে এক মোটা অংকের অর্থ বিনিময়েরও কথা চলছিল অভিযুক্ত শাওন মোল্লার সাথে। এসময় তার কাছ থেকে দুইটি আইডি কার্ড জব্দ করে থানা পুলিশ। তার একটিতে ফ্রন্ড সাইডে এনএনসি তালাশ ও আরেকটিতে এনএনসি ফাউন্ডেশন ও পিছনে সংগ্রহ বার্তা নামক লোগো ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে থানা পুলিশ এই চক্রের মূলহোতা কে আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের কৌশলগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে, তা টের পেয়ে প্রথম পর্যায়ে আরিফের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ অব্যহত রাখলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দেয় শাওন মোল্লা। আটক আরিফ তার ব্যাক্তিগত পরিচয়ে জানান, তিনি বরিশাল নগরীর মুসলিম গোরস্থান রোড, বিসিসি ২১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শিক্ষাগতায় তেমন কোন যোগ্যতা না থাকলেও তিনি কোন কারণে সাংবাদিক কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “মটরসাইকেলে স্টিকার থাকলে পুলিশ ধরে না”। তাই সাংবাদিক অঙ্গনের কথিত এক পরিচত জনের মাধ্যমে শাওন মোল্লার কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কার্ড গ্রহণ করে সে। এদিকে এমন ঘটনায় দীর্ঘদিন দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার সুনাম নষ্ট করা এই ভুঁইফোড় চক্রের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ মারুফ হোসেন। থানা পুলিশ সাংবাদিকতার নামে এই প্রতারক চক্রের সংশ্লিষ্টতা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এমন ঘটনার মূলহোতা কে আটক করতে বদ্ধ পরিকর রয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করে, অভিযুক্ত মূলহোতা শাওন মোল্লা এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে কার্ড বাণিজ্য করাসহ বরিশালের বিভিন্ন স্থানে নিজেকে একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে। তার এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট হয়ে একাধিক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন প্রকৃত গণমাধ্যমে বিস্তার অভিযোগ করেন। এরপরও প্রশাসনের চোঁখে ধূলো দিয়ে শাওন মোল্লা তার এমন বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে বহাল তবিয়াতে। জানা গেছে তার এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিক পরিচয় জাহির করে ধরা ছোঁয়ার আড়ালে চলে যায়। শুধু তাই নয় তার এই কাজে তার ঊর্ধ্ব একাধিক কথিত সাংবাদিক পরিচয়দান ব্যাক্তির সম্পৃকতা রয়েছে বলে জানা যায়। এদিকে ভূয়া পরিচয়পত্র বহনকারী মোঃ আরিফ খান কে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার চৌকস কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আব্দুর রহমান মুকুল জানান, সাংবাদিকতার মহান পেশাকে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করে সাধারণ জনগনের সাথে প্রতারণা করে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এই ধরনের চক্রের মূলহোতাদের যত দ্রুত সম্ভব অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।