প্রতিনিধি ১ ডিসেম্বর ২০২০ , ৪:৪৩:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের বিতর্ক মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ। যিনি প্রবাসীর ১৭ বছরের সংসার ভেঙে তার স্ত্রী দুই সন্তানের জননীকে বাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন। আত্মসাত করেছেন প্রবাসীর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ ২৪ লক্ষাধিক টাকার মালামাল।
এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন প্রবাসীর পরিবার। এমনকি কাজী মুরাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে দিয়েছেন অভিযোগ।
কিন্তু এসব কিছুর পরেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও আদৌ তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বরং বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরে ভোল পাল্টে ফেলেন জেলা ছাত্রলীগের ওই নেতা। তিনি নিজের দেয়া বক্তব্য এবং দায়িত্ব এড়িয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাতের কাধে চাপিয়ে দিচ্ছেন দায়িত্ব। আবার সুমন সেরনিয়াবাত মুরাদ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে লুকচুরি খেলছেন সাংবাদিকদের সাথে।
অভিযোগ উঠেছে সব কিছু জেনে-বুঝেও রহস্যজনক কারণেই মুরাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না জেলা ছাত্রলীগ। ফলে বিতর্কিত এই নেতার অনৈতিক এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নিজ অনুসারীদের দিয়ে পাহারা বসিয়ে গৃহবন্ধি করে রেখেছেন প্রবাসী পরিবারকে। নানাভাবে হয়রানিসহ দেখাচ্ছেন ভয়ভীতি। তাই ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয়দের প্রশ্ন এখন একটাই ‘কাজী মুরাদের খুটির জোর কোথায় ?’
অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল সূত্র অভিযোগ করেছেন, ‘প্রবাসীর সংসার ধ্বংস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ রাজনৈতিক উপর মহলকে ম্যানেজ করেই ক্ষমতায় টিকে আছেন। এমনকি বরিশালের নেতারা পক্ষে থাকায় কোন শক্তিই তাকে দমন করতে পারবে না’ এমনটাই দম্ভক্তি করছেন বিতর্কিত এই নেতা।
অভিযুক্ত কাজী মুরাদ মুলাদী পৌর সদরের মৃত আতাহার আলী কাজীর ছেলে। উপজেলার ষোলঘর গ্রামের আকতার খানের মেয়ে আছমা খানম লাকী মুলাদীর চরকালেখান ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য এবং একই ইউনিয়নের আবুল হাসেম কাজীর প্রবাসী ছেলে মোতালেব কাজীর সাবেক স্ত্রী।
প্রবাসী মোতালেব কাজী মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে লাকীকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর স্ত্রীর নামে মুলাদী জনতা ব্যাংকে হিসাব নম্বর খুলে দেন তিনি। এরপর থেকে প্রতি মাসে ওই হিসাব নম্বরে টাকা পাঠানো শুরু করেন। এমনকি মুরাদকে বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের ওই হিসাব নম্বরে ২০ লক্ষ টাকা গচ্ছিত ছিল। এছাড়া শিশু কন্যা ও স্ত্রী লাকীকে বিভিন্ন সময় ৪ লাখ টাকা মূল্যের বিদেশী স্বর্ণালংকার দিয়েছেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘মুরাদের সাথে পরকীয়া সম্পর্কের পর থেকে ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ২০১৬ সালে আমার হাতে তাদের প্রেমের সম্পর্ক ধরা পড়ে। কিন্তু দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে তাকে বহুবার ক্ষমা করে দেই।
মোতালেব কাজী আরো জানান, লাকী ও মুরাদের বিয়ের পর আমি ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার পাঠানো ২০ লাখ টাকা এবং ঘরে থাকা ১২ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় লাকী। যে টাকায় সম্পদশালী হয়েছে তার স্ত্রীর পরকীয় প্রেমিক ছাত্রলীগ নেতা কাজী মুরাদ।
মোতালেব কাজীর পিতা বৃদ্ধ আবুল হাসেম কাজী বলেন, লাকীর কারণে আমাদের পরিবারের মানসম্মান শেষ হয়েছে। সাথে আমার ছেলের জীবনের সকল উপার্জন লাকী ও মুরাদ আত্মসাত করেছে। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী পদক্ষেপ নিতে পারছি না। যেখানেই যাই সেখানে মুরাদ ছাত্রলীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তাতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি। আমরা যাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে না পারি সে জন্য বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা যাতে ঘরের বাইরে যেতে না পারি সে জন্য বাড়ির বাইরে পাহারা বসিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ারও পায়তারাও করছে মুরাদ। আমার ছেলে দেশে আসলে তাকে দেখে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মুরাদ। এ কারণে আমার ছেলে দেশেও আসতে পারছে না।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘কাজী মুরাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। এমনকি আবেদনের কপি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের কাছে প্রেরণ করেছি। কিন্তু এর পরেও কাজী মুরাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার পাশাপাশি কাজী মুরাদ ও সাবেক পুত্র বধূর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন প্রবাসী ও তার অসহায় পরিবার।