প্রতিনিধি ২২ জুন ২০২১ , ৯:১৪:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
গৌরনদী ও ভোলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২
মজিবর রহমান নাহিদ ॥ সকাল থেকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গতকাল শুরু হয় বরিশাল বিভাগের ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ঝালকাঠি পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই এ ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। প্রতিটি কেন্দ্রেই পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো বেশি। কোন ধরনের বাঁধা ছাড়াই সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানায় সাধারণ ভোটাররা।
মকবুল হাওলাদার নামে এক ভোটার বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠ হয়েছে আমার জীবনের এতো সুন্দর ভোট কোনদিন দেখিনাই।’ নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের আফরোজা আক্তার নামে এক নতুন ভোটার বলেন,‘আমি নতুন ভোট দিয়েছি এবার, আমার অনেক ভালোই লাগছে। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ খুব সুন্দর।’ ভোট কেন্দ্রে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা যেন না হয় সেজন্য সতর্ক অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এদিকে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১৫-১৬টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মৌজে আলী মৃধা (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় উভয় পক্ষের আরও পাঁচ-ছয়জন আহত হন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। নিহত মৌজে আলী মৃধা কমলাপুর গ্রামের মৃত কাদের মৃধার ছেলে। আহতদের মধ্যে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী মন্টু হাওলাদার, মো. ইদ্রিস, মো. ইমরান হাওলাদারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রব হাওলাদার বলেন, ‘মোরগ প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ মৃধার কর্মী নয়ন মৃধা কমলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে টিউবওয়েল মার্কার প্রার্থী মন্টু হাওলাদারের লোকজন তাকে ধাওয়া করে। নয়ন মৃধা কেন্দ্রের বাইরে এসে বিষয়টি ফিরোজ মৃধাকে জানায়। এ সময় মন্টু হাওলাদারের লোকজন এসে পড়লে দুই প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে এক পক্ষ অপর পক্ষকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করে। এ সময় ১৫-১৬টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সংঘর্ষ থামাতে এগিয়ে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ছয় রাউন্ড ফাকা গুলিবর্ষণ করে। এদিকে উভয় পক্ষের ছোড়া বোমা বিস্ফোরিত হয়ে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘মৌজে আলী মৃধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য লাঠিসোটায় আঘাত পেয়েছে। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংঘর্ষে জড়িত উভয় পক্ষের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে ঘণ্টাব্যাপী ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।’ সকাল ১১টার দিকে ভোলার চরফ্যাশনের হাজারিগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রতিপক্ষের গুলিতে মনির নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এছাড়া হিজলা উপজেলার মেমানয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষে ১০ জন কর্মী সমার্থক আহত হয়।
অন্যদিকে পটুয়াখালীর বাউফলে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২১ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, বরিশালের ছয় জেলার ১৭৩টি ইউনিয়নে মোট ২৮ লাখ ৯৮ হাজার ৮৬৯ জন ভোটার রয়েছেন। এসব ইউনিয়নের মধ্যে ১৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন গণনা চলছে।