প্রতিনিধি ২১ অক্টোবর ২০২১ , ১২:৪০:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবর রহমান নাহিদ ॥ বরিশাল নগর বাসীদের ঘুম অনেকটা হারাম করে দিয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন। বড় গাড়ি থেকে শুরু করে মোটরসাইকেলে পর্যন্ত এ হর্ন লাগানো হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় মাঝে কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও ফের নগরীজুড়ে মোটরসাইকেলে ওই হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এটি বন্ধের তেমন উদ্যোগ নেই! হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনাও জানা নেই অনেকের।
নগরীতে হর্নের যন্ত্রণায় ঘরে বসাও দায় হয়ে পড়েছে। নগরীর বগুড়া রোড এলাকার ফিরোজ আলম জানান, তার বাড়ি প্রধান সড়কের পাশে। একটু জটলা হলেই তীব্র হর্ন বাজানো হয়। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তার ছেলেকে কানের সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, উচ্চ শব্দের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয় বরিশাল সদর হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ বলেন,‘অতিরিক্ত শব্দের কারণে কানের টিস্যু গুলো ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যায়। এছাড়াও রক্ত যেসব ধমনী দিয়ে প্রবাহিত হয় তাদের উপর চাপ তৈরি করে। ফলে মস্তিস্কের ভিতরে এবং হৃদপিন্ডে ভিতরে ছোট ধমনী গুলো ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আর শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছ- কানে কম শোনা সহ,শ্রবনশক্তি হারিয়ে ফেলা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থায়ী মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, নিদ্রাহীনতাসহ নানাবিধ জটিল রোগে।
তিনি আরো বলেন, ‘ডেসিবল শব্দ ৯০ এর উপরে উঠলে মানবদেহে বেশি ক্ষতি হয়। একজন মানুষের যখন নাক বন্ধ থাকে সে মুখ থেকে অক্সিজেন নেন তখন মুখের ভিতরে ধুলা বালু যেতে পারে,তাতেও ক্ষতি হচ্ছে।’
বরিশাল মেট্রপলিটন ট্রাফিক পুলিশের টিআই আব্দুর রহিম দৈনিক আজকের তালাশকে জানান, সড়ক পরিবহন আইনে উল্লেখ করা আছে, কোন মোটরযান চালক, মালিক বা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দমাত্রা সৃষ্টিকারী কোন যন্ত্রাংশ বা হর্ণ মোটরযানে স্থাপন, পুনঃস্থাপন বা ব্যবহার করিতে পারিবে না বা করিবার অনুমতি দান করিতে পারিবে না। যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৪৫ এর উপ-ধারা (২), (৩) ও (৪) এর বিধিমালা লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কর্তন হইবে। এদিকে হাইড্রোলিক হর্নের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন হচ্ছেন খোদ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করা নগর ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্যরা জানান,‘নগরীতে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বেড়েছে, এতে ডিউটি করার সময় প্রায়ই আমাদের মাথাব্যথা হয়। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন মোটরযান পাটর্সের দোকানে হরহমেশাই বিক্রি হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন। কোন ধরনের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে তারা এসব হর্ন বিক্রি করছেন।
একাধিক নরবাসী জানান,‘হাইড্রোলিক হর্ন যদি নিষিদ্ধই হয়ে থাকে তাহলে দোকানগুলো কিভাবে এই হর্ন বিক্রি করছেন এবং মোটরসাইকেল মেকাররা কিভাবে তা লাগিয়ে দিচ্ছেন। মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি এসব পার্টসের দোকানদার ও মেকারদেরও আইনের আওতায় আনলে লাগাম টানা যাবে হাইড্রোলিক হর্নের।’
এবিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম তানভীর আরাফাত, পিপিএম (বার) দৈনিক আজকের তালাশকে জানান, ‘আমরা ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সব সময়ই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। নগরীতে যেসকল মোটরযান হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’