প্রতিনিধি ৪ জানুয়ারি ২০২২ , ৮:৪৪:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ ‘নদীর একুল ভাঙ্গে, ওকুল গড়ে, এইতো নদীর খেলা’ হ্যা কবির এই কথার সাথে অনেক মিল রয়েছে ধান—নদী আর খালের জনপদ বরিশালে। বৃহত্তর বরিশালের বেশ কয়েকটি অঞ্চল এখন নদীর গর্ভে বিলীন। কোথাও কোথাও ভাংছে আবার কোথাও চর পড়ছে। আবার কোথাও কোথাও চর পরেও খ্যান্ত হয়নি, সেখান থেকেও পুনরায় ভাঙ্গন হচ্ছে। এই ভাঙ্গণের মধ্যে বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতী ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের একটি কাজ নিয়ে দুশঃচিন্তায় পড়েছেন স্থানীয়রা।
সেখানে চর পরায় ভাঙ্গণে দিশেহারা মানুষগুলো কিছুটা স্বস্তি পেলেও চরের উত্তর পাশ থেকে আবারও ভাঙ্গনের প্রবনতা ক্রমশই বাড়ায় আবারও চিন্তিত তারা। আর এর মধ্যেই ভাঙ্গণ কবলীত এলাকায় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করায় হতভাক স্থানীয় সচেতন মহল।
সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ মার্চ ১৬৮৭ স্মারক নাম্বারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশাল এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দেশ ব্যাপী গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ামতী বন্দর বাজারের অনুমোদন প্রকল্প পাঠানো হয় এবং এ কাজের জন্য চার কোটি চব্বিশ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ করা হয়।
এ প্রকল্পটির সংবাদে প্রথমে স্থানীয়রা আশার আলো দেখলেও পরে হতাশায় ভুগছেন তারা আর এর মূল কারন হলো প্রকল্পটি নদী ভাঙ্গণের মাত্র ৫০ফুট দূরত্বে স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে। এমন অভিযোগ এনে নদী ভাঙ্গণের হাত থেকে সরকারী এই প্রকল্পটি রক্ষায় জরুরী কোন পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আর এমন দাবীতে স্থানীয় বাজারের বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী, বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কাছে পৃথকভাবে আবেদন জমা দিয়েছেন।
ওই আবেদন সূত্রে জানা যায়, যে স্থানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় সেখান থেকে বিষখালী নদীর দূরত্ব মাত্র ৫০ফুট। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে এই স্থানে নদী ভাঙ্গণ প্রকপ আকার ধারন করে। কিন্তু বাজারের কিছু স্থানীয় মতলবাজ, দুষ্কৃতিকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা দাবী করে আসছে, এতে ব্যবসায়ী সম্মত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে ভাঙ্গণ কবলীত স্থানে বাজার অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারী কোটি কোটি টাকা বিনষ্ট হওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে।
অভিযোগপত্রটির একটি কপি হাতে আসে দৈনিক আজকের তালাশ এর অনুসন্ধানী মাধ্যমের কাছে। সেই সূত্র ধরে এবার বাকেরগঞ্জের নিয়ামতি বাজারে আমাদের অনুসন্ধানী মাধ্যম। অনুসন্ধানী মাধ্যমকে কাছে পেয়ে যেন ক্ষোভ ঝাড়তে শুরু করেন স্থানীয় অসহায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আর এই ক্ষোভের কারন শুধুই উচ্ছেদের ভয়!
তারা জানান,‘দীর্ঘ বছর যাবত তারা ওই বাজারে ব্যবসা করে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে, কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের খবর শুনে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল এই প্রকল্পকে অবৈধ অর্থ উপার্যনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের পায়তারা চালিয়ে আসছে।
ওই প্রভাবশালী মহল প্রথমে তাদের কাছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের বরাদ্ধকৃত জমিতে দোকানঘর রাখার রফাদফা করার চেষ্টা করেন। আর প্রভাবশালীদের এই প্রস্তাবে রাজি হন নি ওই বাজারের হতদরিদ্র প্রায় ৪০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তারা টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় তাদের উচ্ছেদ আতংকে রাখছে প্রতিনিয়ত।
অন্যদিকে নিয়ামতির সচেতন মহলের একাধিক ব্যক্তিরা জানান, যেকোন প্রকল্প সরকারী একটি সম্পদ। সরকার আমাদের গ্রামের উন্নয়নের জন্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছেন কিন্তু বাজারের আশেপাশে এতো জায়গা থাকতে কেন প্রকল্পটি নদী ভাঙ্গনের পাশে করতে হচ্ছে নিশ্চই এর পিছনে কোন কুচক্রি মহলের হাত আছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ দেশের স্বার্থে, নিয়ামতির বাসিন্দাদের স্বার্থে আপনারা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে তদন্তপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তবে ওই জায়গা অনেক বছর ভাঙ্গে না দাবী করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর বাকেরগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়া আজকের তালাশকে জানান,‘ওখানেই আপদত ভবন নির্মানের জায়গা নির্ধারন করা হয়েছে, ভবনের নকশার কাজও শেষ।’ তিনি আরও জানায়, ‘স্থানীয় কিছু সমস্যার কারনে আপাদত কাজ বন্ধ রয়েছে, তাই দরপত্রও ছাড়া হয় নি।’
অপরদিকে দেখা যায় ওই স্থান ছাড়াও বাজারের বিভিন্ন জায়গায় সরকারী খালি জায়গা রয়েছে। যেখানে চাইলে ওই ভবনটি নির্মান করা যায় বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।