প্রতিনিধি ৬ মে ২০২২ , ৪:৩৫:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে তড়িঘড়ি বরিশাল নদীবন্দর ছেড়েছে বিলাসবহুল ১২ লঞ্চ।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে বরিশাল ছেড়ে যায় সব লঞ্চ।
তিনি জানান, ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করা এসব লঞ্চ হচ্ছে কুয়াকাটা-২, কীর্তণখোলা-২, কীর্তণখোলা-১০, সুরভী-৮, সুরভী-৯, সুন্দরবন-১০, সুরভী-৮, পারাবাত-৯, পারাবাত-১৮, মানামী, এডভেঞ্চার-১ ও পারাবাত-১০।
এ ছাড়া ভায়া রুটের পাঁচটি লঞ্চও বরিশাল ছেড়েছে।
সকালে এডভেঞ্চার-৬, দুপুরে গ্রিন লাইন-৩ ও রাজারহাট সি লঞ্চ বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
যে লঞ্চগুলো রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেগুলো সন্ধ্যা ৭টা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
প্রথমে সুরভী-৮ ৭টায় ও সোয়া ৭টায় সুন্দরবন-১০, সাড়ে ৭টায় মানামী ও এডভেঞ্চার-১ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়।
এরপর একে একে সব লঞ্চ বরিশাল ছেড়ে যায়। রাত ৮টার মধ্যে বন্দর ত্যাগ করে সব লঞ্চ।
সরকারি জাহাজ এমভি বাঙালী বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল স্টিমার ঘাট ছেড়ে যায়।
বরিশাল নদীবন্দরে নোঙর করা লঞ্চগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঢাকামুখী লঞ্চগুলোর প্রবেশপথেও যাত্রীরা চাদর বিছিয়ে বসেছেন। ডেকে তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
কেবিনের সামনে, এমনকি ছাদেও যাত্রীরা বসেছেন। মানামী ও এডভেঞ্চার-১ লঞ্চের ছাদে যাত্রী ছিল চোখে পড়ার মতো।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চে ছাদে বিছানা নিয়ে বসা যাত্রী আসমা আক্তার বলেন, ‘পুরো লঞ্চে কোনো জায়গা পাই নাই।
তাই লঞ্চের সাইলেন্সার পাইপের কাছে বিছানা বিছিয়ে বসেছি। যেভাবেই হোক ঢাকা যেতেই হবে।’
এডভেঞ্চার-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. সেলিম বলেন, ‘যাত্রীর অনেক চাপ। কোনো কেবিনই খালি নেই। ডেকও পরিপূর্ণ। তবে আমরা অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছি না।’
তড়িঘড়ি বরিশাল ছেড়েছে ১২ বিলাসবহুল লঞ্চ
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরিশাল নদীবন্দরে থাকা লঞ্চগুলো তদারক করেন।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী নামিয়ে শুধু কেবিনের যাত্রী নিয়ে দ্রুত ঘাট ত্যাগের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় পারাবত-৯, পারাবাত-১৮ ও সুরভী-৯ লঞ্চকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিকুর রহমান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুশফিকুর রহমান ও তরিকুল ইসলাম জানান, সব লঞ্চকে সতর্ক করা হয়েছে যেন অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করে।
অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চ থেকে নামিয়ে তাদের ঘাট ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। তিনটি লঞ্চকে জরিমানাও করা হয়েছে।
নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত রয়েছে। সব লঞ্চের মাস্টারকে নিরাপদে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
বরিশাল নৌ পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করেছে। লঞ্চগুলোতেও বারবার টহল দেয়া হচ্ছে।
টিকিটের অনেক যাত্রী ওঠার আগেই ছেড়েছে লঞ্চ
নির্ধারিত সময়ের আগে ঢাকাগামী বিলাসবহুল সব লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ায় বরিশাল নদীবন্দরে এসে অনেক যাত্রী বিপাকে পড়েন।
ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের বেশির ভাগ প্রথম শ্রেণির টিকিটের। কেবিনের টিকিট পেয়েও লঞ্চে উঠতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকে।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের কেবিনের যাত্রী ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘আমাকে রাত ৮টায় বরিশাল নদীবন্দরে আসতে বলা হয় কাউন্টার থেকে।
পৌনে ৮টায় এসেও লঞ্চ পাইনি। তিনতলায় কেবিনের টিকিট ছিল, পরিবার নিয়ে যাওয়ার কথা।
এখন ফিরে যাচ্ছি। লঞ্চ যখন আগেই ছাড়বে, তখন সেভাবে আমাদের বলা উচিত ছিল।’
সুরভী-৮ লঞ্চের যাত্রী আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘এসেছি সাড়ে ৭টায়। লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৭টায়। আমাদের বলা হয়েছিল সাড়ে ৮টার আগে লঞ্চ ছাড়বে না।’
নির্ধারিত লঞ্চ না পেয়ে অন্য লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে হাজারো মানুষকে।
পরে সুন্দরবন-১২ ও পূবালী-২ নামের দুটি ভায়া লঞ্চে কিছু যাত্রী নেয়া হয়। যারা লঞ্চে উঠতে পারেননি তারা ফিরে গেছেন। অনেকে বাস টার্মিনালের উদ্দেশে রওনা হন।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের ম্যানেজার মো. জাকির বলেন, কেবিনের অনেক যাত্রী নিতে পারিনি।
ম্যাজিস্ট্রেট এসে দ্রুত ঘাট ত্যাগ করতে বলেছিলেন, তাই নির্ধারিত সময়ের আগে লঞ্চ ছাড়তে হয়েছে।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘লঞ্চগুলো যাত্রী পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দুর্ঘটনা এড়াতে সব লঞ্চকে ঘাট ত্যাগে বাধ্য করান।
লঞ্চগুলো ঘাট ত্যাগ করানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।’