প্রতিনিধি ৬ নভেম্বর ২০২৩ , ১১:৪০:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলা প্রতিবেদক॥ মোঃ নুর আলম। ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালের ৩১ জুলাই বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুর আলম। তবে মারা যাওয়ার ১ বছর ৪ মাস পরেও গত ২ অক্টোবর এক নাশকতার মামলার আসামি করা হয় তাকে। মামলায় ৬৯ জন আসামির মধ্যে নুর আলমকে ১০ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ভোলা সদর থানা মামলা নং ০৪/৬২০। এদিকে মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় নুর আলমের পরিবারসহ স্থানীয়রা বিস্মিত হয়েছেন। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নুর আলমের বড় ভাই আবুল কাশেম বলেন, নুর আলম মারা গেছে এটা ভোলার কে না জানে? এখন আমার মৃত ভাইয়ের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এই জালেমের বিচার আল্লাহ করবে। এই কাজটি করেছে শফিকুল নামে এক লোক। ওই শফিক থানার দালাল। পুলিশ তাকে বাদি করে মামলা করে। মিথ্যা মামলা করতে পুলিশ এই শফিককে ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মামলার কাগজ দেখে আমরা অবাক হয়েছি। আর এমন ঘটনা নতুন নয়। আওয়ামী পুলিশ এগুলো প্রায়ই করে থাকেন। তারা বিএনপির কমিটির তালিকা ধরে ধরে আসামি করে। এতে কে মারা গেছে, কে বেঁচে আছে- তাদের এসব দেখার সময় নাই। তারা যত মামলা করবে তত দ্রুত প্রমোশন পাবে। একদিন সবকিছুর বিচার হবে। সে দিন আর বেশিদূর নেয়।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী। মামলার ১০ নম্বর আসামি ১ বছর ৪ মাস আগে মারা যাওয়ার পরেও তাকে কেন আসামি করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শফিকুল বলেন, আমি নুর আলম নামে কাউকে আসামি করিনি। আমি যাকে আসামি করেছি তার নাম মহিউদ্দিন, পিতার নাম নুর আলম। এটা পুলিশের ভুলে হতে পারে।
মামলার এজহারে বলা হয়, ২ নভেম্বর বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে বিএনপি ও জামায়াতের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হন। ভোলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, বিদেশি অস্ত্র হাতে জনসাধারণকে ভয় দেখান। এবং জনসাধারণকে হত্যার জন্য ধাওয়া করেন। আসামিরা সকলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এই কার্য সম্পাদন করেন। তারা মামলার বাদি শফিকুল ইসলামকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ধাওয়া করেন। এবং শহরের অলিতে গলিতে আগুন জ্বালিয়ে নাশকতার চেষ্টা করেন। বেশ কয়েকটি ককটেল ছুড়েন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল ফুটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের ফেলে যাওয়া অবিস্ফোরিত চারটি ও বিস্ফোরিত একটি ককটেল উদ্ধার করে। এছাড়া চারটি পেট্রল বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার এজাহারে ৬৯ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। মামলায় পেনাল কোড ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩০৭/৩৭৯/১১৪/১০৯/৫০৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
তবে পুলিশ নূর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি অস্বীকার করে এজহারের কপিকে সুপার এডিট দাবি করেছেন ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির। তিনি বলেন, নুর আলম নামে কাউকে আসামি করা হয়নি। এটা সঠিক না। আপনি যেটা দেখেছেন সেটা এডিট করা হতে পারে। মারা যাওয়া কাউকে আসামি করা হয়নি।