বরিশাল

নগরীর ধানগবেষনা রোড সালিশির নামে বৃদ্ধের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঝাড়ুপেটা!

  প্রতিনিধি ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ২:০০:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ধানগবেষনা রোড এলাকায় সালিশির নামে বৃদ্ধের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঝাড়ুপেটা করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডস্থ ধানগবেষনা রোডের খেয়াঘাট সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী রফিকুল ইসলাম যার নং-৫২ (১৯/৪/২০২৪)। রাতেই হান্নান (৩৮) নামের এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ভূক্তভোগী রফিকুল ইসলাম নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডস্থ ধানগবেষনা রোডের খেয়াঘাট সড়কের মৃত আফছার উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে।

 

অভিযুক্তরা হলেন- ওই এলাকার মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে কবির (৩৮), মৃত হোসেন খানের ছেলে হান্নান (৩৮), বিসিসির সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম (৪০), ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া এএসএম রায়হান (২৮) সহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন।

 

মামলা সূত্রে জানা যায়- রফিকুলের বসতঘরের সামনেই তার নিজের একটি মুদি দোকান রয়েছে। সেই দোকান চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। ওই এলাকার কবিরের সাথে তার জমিজমা নিয়ে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। কবির সর্বদা তার জমি দখলের পায়তারা করে আসছে। অন্যান্য আসামীরা কবিরের সহযোগী ও এক দলভূক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডস্থ ধানগবেষনা রোডের খেয়াঘাট সড়ক থেকে সাগরদী ব্রীজ এলাকায় যাওয়ার পথে রফিক তার মুদি দোকানের সামনে পৌঁছালে আসামীরা অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন লোক নিয়ে পথরোধ করে। পরে তারা রফিককে তার বাড়ির উঠানে নিয়া যায়। সেখানে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে লোকজন জড়ো করিয়া শালিস বসায়। শালিসের নামে আসামীরা রফিককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ও তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সামাজিকভাবে মানহানি করে। একপর্যায়ে কবির জুতার মালা বানিয়ে হান্নানের সহায়তায় সকলের সামনে জোরপূর্বক ভূক্তভোগী রফিকুলের গলায় পড়িয়া দেয়। তখন বিসিসির সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম রফিককে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে। মারধরের একপর্যায়ে হান্নান তাকে চর থাপ্পর মারে এবং তার দাড়ি টেনে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় কবির তার লুঙ্গির কোচরে থাকা নগদ ২ হাজার টাকা নিয়া যায়। অতঃপর কবির ও হান্নান মারধরের ও জুতার মালা পড়ানো মানহানিকর ভিডিও তাদের মোবাইলে ধারন করে। পরবর্তীতে ভিডিও হান্নান ও এএসএম রায়হান তাদের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি ‘Hannan Hannan Khan’ ও ‘Asm Raihan Asm’ ভাইরাল করে সম্মান ক্ষুন্ন করে। অপরদিকে আসামীরা রফিকের দোকান পোড়াইয়া দিবে ও তাকে জীবননাশের হুমকি প্রদান করে।

তবে ওই ভিডিওতে ও রফিকের অভিযোগে ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ফিরোজ আহমেদের সম্পৃক্ততা থাকলেও তাকে মামলার আসামী করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভূক্তভোগী রফিকুল ইসলাম।

 

এলাকাবাসী জানায়, সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার দোকানে বসে এক বাচ্চা মেয়ের শ্লীলতাহানীর অপবাদে শালিস বসায় কবির ও কয়েকজন। এ ঘটনায় রফিকের গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ঝাড়ুপেটা করে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

 

ভূক্তভোগী রফিকুল ইসলাম বলেন- ওই বাচ্চাটা আমার সম্পর্কে নাতি হয়। আমার দোকানে মেহেদি নিতে আসলে আমি ভালবেসে তার কপালে একটা চুমু খাই। এ ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে কাউন্সিলরের শ্যালক কবির শালিস বসায়। কবিরের সাথে আমার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। কবির সর্বদা আমার জমি দখলের পায়তারা করে আসছে। এই সুযোগে আমি বাসা থেকে দোকানের সামনে পৌঁছালে কবির ও হান্নান অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জন লোক নিয়ে আমার পথরোধ করে। পরে সেখানে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে লোকজন জড়ো করিয়া শালিস বসায়। শালিসের নামে তারা আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ও আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়া সামাজিকভাবে মানহানি করে।

 

তিনি বলেন- একপর্যায়ে কাউন্সিলর মোঃ ফিরোজ আহমেদের নির্দেশে কবির জুতার মালা বানিয়ে হান্নানের সহায়তায় সকলের সামনে জোরপূর্বক আমার গলায় জুতার মালা পড়িয়া দেয়। তখন মহিলা কাউন্সিলর সেলিনা বেগম আমাকে জুতা ও ঝাড়ু দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে জখম করে। মারধরের একপর্যায়ে হান্নান আমাকে চর থাপ্পর মারে এবং তার দাড়ি টেনে ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় কবির আমার লুঙ্গির কোচরে থাকা নগদ ২ হাজার টাকা নিয়া যায়। এরপর কবির ও হান্নান মারধরের ও জুতার মালা পড়ানো ভিডিও তাদের মোবাইলে ধারন করে। পরবর্তীতে ভিডিও ভাইরাল করে দেয়। এথন আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ খোলা নেই। আমার পরিবারের লোকজন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

 

২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ফিরোজ আহমেদ বলেন- রফিকের দোকানে এক বাচ্চা মেয়ে মেহেদি কিনতে গেলে সে বাচ্চাটির শ্লীলতাহানী করেছে। ওই মেয়ে এক ফাঁকে ছুটে গিয়ে তার বাসার লোকজনকে জানায়। তখন এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে রফিকের গলায় জুতার মালা দিয়ে ঝাড়ুপেটা করেছে। আমরা না গেলে তো লোকজনে ওকে মেরেই ফেলতো।

 

আপনার নির্দেশে রফিকের গলায় জুতার মালা দিয়ে ঝাড়ুপেটা করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আমি একটা জানাযায় এসেছি। এখানকার কাজ শেষ করে আপনার (প্রতিবেদক) সাথে দেখা করবো।

 

বিসিসির সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম বলেন- আমি ওখানে গিয়ে দেখি অনেক লোকজন জড়ো হয়েছে। সেখানে ফিরোজ কাউন্সিলরও ছিল। আমি কোর্টে ছিলাম, গিয়ে শুনি রফিক এক বাচ্চা মেয়েকে চুমু দিয়েছে এবং জড়িয়ে ধরেছে। তার অভিবাবকের কাছে জিজ্ঞেস করছি কি করা যায়। পরে সকলের মতামত নিয়ে তাকে ঝাড়ুপেটা করা হয়েছে।

 

বিষয়টি নিয়ে আইনের দারস্থ না হয়ে রফিকের গলায় জুতার মালা দিয়ে ঝাড়ুপেটা করে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা ভিডিও করতে নিষেধ করেছি। কারা যেন ভিডিও করে ছড়িয়ে দিয়েছে। আর আইন/ আদালত সব বিচার করতে পারেনা তাই স্থানীয়ভাবেও অনেক বিচার করতে হয়। এতে আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আমি অপরাধ করেছি।

 

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) আমানউল্লাহ আল-বারি বলেন, ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত হান্নানকে শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।

আরও খবর

Sponsered content