অপরাধ

বরিশালে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহে গিয়ে নারী কর্মকর্তার স্বামীর হামলার শিকার সংবাদকর্মীরা!

  প্রতিনিধি ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১:০৩:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা মৌসুমী ইসলামের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তার স্বামী কামরুজ্জামান সোহেলের হামলার শিকার হয়েছে চার সংবাদকর্মী। এ সময় তাদের ক্যামেরা ভাঙচুর ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় কাউনিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করছেন দৈনিক আজকের তালাশের রিপোর্টার ফাইজুল ইসলাম।

বুধবার ( ২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪ টার দিকে চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অভ্যান্তরে এ ঘটনা ঘটে।

এরআগের চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা মৌসুমী ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও উৎকোচ গ্রহণ করে গর্বকালীন সেবা কার্ড প্রদানের অভিযোগ করেন মুক্তা আক্তার নামের এক সেবা প্রত্যাশী নারী। তিনি জানান- চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্বকালীন সেবা কার্ড করানো জন্য গেলে তাকে প্রায় ৫ হাজার টাকার পরীক্ষা করাতে দেন মৌসুমী। এমনকি তাদের নির্ধারিত ‘মেডিকো মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামে একটি ডায়াগষ্টিক ল্যাবে পরীক্ষা গুলো করানোর জন্য ওই স্লিপের পিছনে ‘মেডিকো মেডিকেল সার্ভিসেস’ এর সিল মেরে দেন। এসময় মৌসুমী তাকে (মুক্তা) বলেন- এই ল্যাব ছাড়া অন্যত্র পরীক্ষা করালে তা গ্রহন করা হবে না। পরে ধার দেনা করে দরিদ্র মুক্তা পরীক্ষা গুলো করান।

তিনি বলেন- পরীক্ষা গুলো করানোর পর সেই রিপোর্ট জমা দিলে বাড়তি ৫শ টাকা দাবী করেন মৌসুমী। তখন তার কাছে পুরো টাকা না থাকায় তাকে ৪শ টাকা দেন মুক্তা। পরে মুক্তা জানতে পারেন গর্বকালীন সেবা কার্ড করানো জন্য এতো পরীক্ষার দরকার হয় না। এমনকি টাকা নেয়ার বিধান নেই।

এ ব্যাপ্যারে একটি লিখিত অভিযোগ করেন মুক্তা আক্তার। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যায়- দৈনিক আজকের তালাশের সম্পাদক ও প্রকাশক হোসেন মারুফ, বরিশাল ক্রাইম নিউজের শহীদুল্লাহ সুমন, দৈনিক আজকের তালাশের রিপোর্টার ফাইজুল ইসলাম, ক্যামেরাপার্সন খান রাব্বি।

বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়- অফিসে কেউ নেই, অফিস ফাকা। পরে দ্বোতলা থেকে নেমে আসেন চরবাড়িয়া মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারি কমিউনিটি সোহেলী বিনতে রহমান, পরিদর্শিকা মৌসুমী ইসলাম ও তার স্বামী কামরুজ্জামান সোহেল। এ সময় এসেই ভিডিও ধারণ করতে শুরু করেন সোহেল। সেখানে উপস্থিত থাকা অভিযোগকারী মুক্তাকে চোখ রাঙিয়ে নানা বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। তখন ক্যামেরাপার্সন খান রাব্বি ভিডিও ধারণ করতে গেলে তার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তাকে মারধর করেন। এ সময় দৈনিক আজকের তালাশের সম্পাদক ও প্রকাশক হোসেন মারুফ বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে সোহেলকে টেনে অন্য রুমে নিয়ে যান এক নারী। পরক্ষনে আবরো এসে দৈনিক আজকের তালাশের রিপোর্টার ফাইজুল ইসলামের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দ্বোতলায় চলে যান সোহেল।

ঘটনাটি দেখে হতবাক দৃষ্টি তাকিয়ে থাকেন উপ-সহকারি কমিউনিটি সোহেলী বিনতে রহমান। তিনি বলেন- এ রকম হবে ভাবতে পারিনি। সোহেল আমাদের অফিসের স্টাফ নন। তিনি কেন আপানাদের সাথে এমন আচরন করলো সেটা আমার বুঝে আসেনা। তার স্ত্রী এই অফিসে চাকরি করেন সেখানে সোহেলের নাক না গলানোই ভালো বলে আমি মনে করি।

অভিযোগের বিষয়টি স্বিকার করে মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা মৌসুমী ইসলাম বলেন- আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে ‘মেডিকো মেডিকেল সার্ভিসেস’ যেতে বলেছি এবং স্লিপের পিছনে ‘মেডিকো মেডিকেল সার্ভিসেস’ এর সিল দিয়েছি। কিন্তু আমি মুক্তার কাছ থেকে কোন টাকা নেই নি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অফিসার মেহেদি হাসান বলেন- অভিযোগের বিষয়টি আমাকে চেয়ারম্যান সাহেব জানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার আমার নেই। আপনারা উপ-পরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন- সাংবাদিক উপরে হামলার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তারা এতো সাহস কোথায় পায়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বরিশালের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন- এই দপ্তরে চাকুরি করে অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়ানো সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিক উপরে হামলাকারী অফিসের কেউ নন, তার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। আপনারা থানায় যান।

আরও খবর

Sponsered content