প্রতিনিধি ২০ মে ২০২৪ , ১০:১০:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ
এস.এন. পলাশ ॥ বরিশাল নগরীর অলিগলি, কলেজ-ক্যাম্পাসসহ আশপাশে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। বিভিন্ন স্পটে অর্ধশতাধিক মাদক বিক্রেতা ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সহজলভ্য হওয়ায় এর ভয়াল ছোবলে ধ্বংসের পথে যুবসমাজ। বাদ যাচ্ছে না স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে অনেকে জড়াচ্ছে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাচ্ছে। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে ফের জড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়। তাই মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী।
বরিশাল সচেতন নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, দিন দিন মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছে। এর প্রভাবে আমাদের মেধাবী তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। মাদক থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এজন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষের সচেতনতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান দরকার। অন্যথায় এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাব না।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন ৪ থানা এলাকায় অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য। এদের মধ্যে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানার রূপাতলী এলাকার ফয়সাল সহযোগীদের নিয়ে ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে। ঈশ্বরবসু রোডের জসিও ইয়াবা বিক্রি করছে। স্টেডিয়াম কলোনির বাপ্পি, ওয়াপদা কলোনির সোহেল, রসুলপুরের কমলা ও তার স্বামী, একই এলাকার লিপি ও তার স্বামী পলাশ, কেডিসি এলাকার নাজমা ও তার স্বামী নজরুল মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে। তারা ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
একই থানার অপর মাদক ব্যবসায়ীরা হলো-ভাটারখাল এলাকার যুথী-মুন্না দম্পতি, কেডিসি এলাকার নীলু, টিঅ্যান্ডটি কলোনির কালু, বাংলাবাজার এলাকার গাঁজা রফিক ও তার শ্যালক আরমান। এছাড়া নাজিরপুল এলাকার খাটো জামাল, রফিক, নজরুল, সিঅ্যান্ডবি রোডের মাইজ্জা কামাল ও জামাল, সোনামিয়ার পুল এলাকার রিয়াজুল ও সৈয়দ, শেরেবাংলা সড়কের রিয়াজুল, বিএম কলেজের দেলোয়ার হোসেন দিলু। এরা সবাই গাঁজা বিক্রেতা। এছাড়া নতুন বাজার এলাকার বেবি, হারুন ও তাদের ছেলে রাকিব ফেনসিডিল বিক্রি করছে।
কাউনিয়া থানার নগরীর কাউনিয়ার পান্থ সড়কের হাতকাটা নিজাম, পশ্চিম কাউনিয়ার খালপার বস্তির মৃত কামরুলের পূত্র সাজন ও সাওন, পলাশপুরের বৌ-বাজার এলাকার গাঁজা কালাম, পলাশপুর ৭নং গলির জয়ফুলের ছেলে রিপন, পলাশপুর ২নং গলির নান্টুর ছেলে ইসমাইল, কাউনিয়ার শিশুপার্ক কলোনির বাডি মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ৪নং পলাশপুর ভোজা রাকিব, ৫নং পলাশপুর জামাইবাজারে স্বপন ও শাকিল, ১নং পলাশপুর ডগ স্বপন, ২নং পলাশপুর পেডা শাহীন, ভাসাই, রাজিব-আঁখি দম্পতি, মোহাম্মদপুর এলাকার জনি মাদক ব্যবসা করছে।
এর বাইরেও বাউয়া সোহাগ, ভাঙারি সোহেল, ময়লাখোলা এলাকায় রাশেদ-লাবণী, বাসু মিয়ার গলির বাসিন্দা ভাঙারি রাশেদ ও মুন্নি, বিসিক কমিশনার গলি মীরা সোহেল, কাউনিয়া হাউজিং এলাকার মজনু, বিসিক বাস্তুহারা কলোনির সজল ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করছে। তালতলি এলাকায় রাসেল মেম্বার ইয়াবার পাইকারি বিক্রেতা।
বিমানবন্দর থানা এলাকার অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী চহটা গ্রামের চডা রাসেল। নথুল্লাবাদের ফেন্সি বাবুল, কাশিপুরের জাহিদ ও কাশিপুর বাজারের সজল ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি করে আসছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বন্দর থানার চরকাউয়া মুসলিম পাড়া এলাকার রাজু-লাকি দম্পতি, চরকাউয়া বড়ইতলা এলাকার কবির, ছোট্ট ওরফে রনি, চরকাউয়া খেয়াঘাট মিলন, চরকাউয়া জিরোপয়েন্ট এলাকার হাড্ডি সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে। এছাড়াও চরআইচা এআরখান এলাকার মিজান ও তার ছেলে জিয়া, কর্নকাঠী চৌমাথা এলাকার রুবেল, রাজিব, শুভ, চরকরঞ্জি এলাকার রিশাদ, শাহ আলম, দিনারের পোল এলাকার শাওন ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রির সঙ্গে জড়িত।
এ বিষয়ে বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, এদের সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত কাজ করছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীর কারও অবস্থান শনাক্তের সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। মাদক কারবারিরা যতই শক্তিশালী হোক তাদের সমূলে নির্মূলে আমরা কাজ করছি।