প্রতিনিধি ৩০ জুন ২০২৪ , ৩:২৩:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নানা উপায়ে কিনেছেন বিলাসবহুল দামি গাড়ি ও একাধিক বহুতল ভবন। ঢাকায় এবং বরিশালে ৩টি ফ্ল্যাটসহ সরকারি জমিতে করেছেন পাঁচতলা ভবন। নামে বেনামে কিনেছেন একরের পর একর জমি। স্ত্রীর নামেও কিনেছেন একাধিক জমি, করেছেন মাছের ঘেরসহ এগ্রো ফার্ম।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে তার জমি ও সম্পদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাসজমিতে করেছেন পাঁচতলা ভবন। ঢাকায় কিনেছেন দুটি ফ্ল্যাট, বরিশাল নগরীর হাসপাতাল রোড এলাকার অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ড্রিম প্যালেসে কিনেছেন কোটি টাকার ফ্ল্যাট। (ফ্ল্যাট নং- ৩-অ)। এছাড়া সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমিতে স্ত্রীর নামে করেছেন সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও এগ্রো ফার্ম।
শহরতলির কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাসে ৮০ শতাংশ জমি কিনে করেছেন সুগন্ধা এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ। একই এলাকায় কাগাসুরা বাজারের পাশে একশ শতাংশ জমি কিনে তার ওপর করেছেন মালটা বাগান। নগরীর ৪নং ওয়ার্ডে কিনেছেন ১২ শতাংশ প্লট ও লাকুটিয়া বাজার এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপর করেছেন সুগন্ধা পোল্ট্রি খামার। এছাড়া তালতলী বাজারে স্ত্রীর নামে রয়েছে ইট, বালু ও রড সিমেন্টের দোকান।
এছাড়া নিজের, স্ত্রীর ও ছেলের নামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। চাকরির সুবাদে যখন যেখানে বদলি হয়েছেন সেখানেই কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার সব সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশ কোটির বেশি বলে জানান স্থানীয়রা। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস খতিয়ে দেখার দাবিও জানান স্থানীয়রা।
সায়েস্তাবাদ এলাকার বাসিন্দা সাহাবুদ্দিন জানান, একজন সাব-রেজিস্ট্রার হয়ে এত বিশালাকার জমি কীভাবে কিনেছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে এখন সবকিছুই সম্ভব, যা কিছু অবৈধ উপায়ে হচ্ছে তা সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই করছেন।
কাগাসুরা বাজার এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, শুনেছি সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এ জমি কিনে মাল্টা বাগান করেছেন। এই বাগান দেখাশোনার জন্য একজন লোক নিয়োগ দেওয়া রয়েছে এখানে। মাঝে মাঝে সাব-রেজিস্ট্রার এখানে এসে ঘুরে যান। এছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি বিশালাকার প্লট রয়েছে।
সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোলের বিভিন্ন এলাকার সম্পদ ও জমির খোঁজ নিতে গেলে তার ছেলে ফোন দিয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে চা খেয়ে কথা বলে সংবাদ প্রকাশ না করার কথা বলেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এত সম্পত্তি আমার নেই, তবে বরিশালে একটি, ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাটসহ পাঁচতলা ভবন আছে। এছাড়া কিছু জায়গা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব সম্পত্তি ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে আছে। ফাইলের বাইরে এক শতাংশ জমিও নেই। সরকারকে প্রতি বছর এসব সম্পত্তির ট্যাক্স দিই। তাছাড়া এসব নিয়ে দু-তিনবার দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ডাকা হয়েছিল। তারা সম্পদের বিবরণী খতিয়ে দেখেছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার হয়ে যদি অবৈধভাবে কোনো কিছু করেন তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।