প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:৫৯:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীতে অভিযান চালিয়ে ৯ টন জাটকা জব্দ ও দুজনকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। এ সময় জাটকা বহনকারী ট্রাকটিও জব্দ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী মৎস্য কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে অভিযান করার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারনে নৌ পুলিশ নিজেরাই অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি আটক করে নিয়ে আসে নৌ সদর থানায়। এরপর থেকেই জব্দকৃত সেই জাটকা নিয়ে শুরু হয় নাটকীয়তা। এই নাটকীয়তায় প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দেন নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন ইসলাম।
বুধবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (দপদপিয়া) সেতুর টোলঘর এলাকায় এ অভিযান চালায় নৌ পুলিশ। এরপর জাটকা বোঝাই ট্রাকটি নৌ সদর থানার সামনে নিয়ে আসলে ঢোপ কেটে ৪/৫ টি ব্যাগ ভর্তি মাছ নিয়ে যায় নৌ থানা পুলিশের সদস্যরা। তার কিছু সময় পর সেই মাছের ট্রাক নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ লাইন্সের মধ্যে। সেখানে বসে গরীব দুঃখিদের মাঝে মাছ বিতরণের কথা থাকলেও হাতে গোনা কয়েকজন গরীব দুঃখির মাঝে বিতরণ করা হয়। এ সময় অগণিত পুলিশ সদস্যরা সেখানে এসে ব্যাগ ভর্তি করে মাছ নিয়ে যায়। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে হ্যান্ড মাইকে বলা হচ্ছিল কোন পুলিশ সদস্য যেন মাছ না নেয়। এরপরেও নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দ্বীন ই আলমের নির্দেশে অনেক পুলিশ সদস্য মাছ নেয়ার জন্য লাইনে দাড়ান। তখন নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দ্বীন ই আলম উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান কিছু মাছ গরীব পুলিশ সদস্যদের দেয়া হবে। মাছ নিতে আসা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের বিতর্কিত সেই এএসআই সোহাগকেও মাছ নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে মাছ নিতে আসা গরীব দুঃখিদের মাঝে প্রশ্ন ওঠে সরকারি চাকুরিজীবীরা গরীব হয় কিভাবে। তারা তো মাস শেষে মোটা অঙ্কের টাকা বেতন নেন।
পুলিশ লাইন্সে মাছের ট্রাকটি নিয়ে ট্রাক থেকে প্রায় সকল মাছ নামানো হলেও রহস্যজনকভাবে ট্রাকের মধ্যে প্রায় ৭ থেকে ৮ টি মাছের ঢোপ রেখে দেয়া হয়। ট্রাকে রেখে দেয়া সেই ঢোপ থেকে অসাধু কিছু পুলিশ সদস্যরা মাছ বের করে কয়েকটি ব্যাগ ভর্তি করছিলেন। ব্যাগ ভর্তি সেই মাছ গোপনে নিয়ে যাওয়ায় সময় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হলে মাছ রেখে দৌড়ে পালিয়ে যান সেই পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশের এহেন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দ্বীন ই আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ট্রাকে রেখে দেওয়া কিছু মাছ জব্দ তালিকায় দেখানোর পাশাপাশি গরীব পুলিশ সদস্যদেরকেও দেয়া হবে।
লাইনে দাড়িয়ে থাকা এক পুলিশ সদস্য ব্যাগ ভর্তি মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে ক্ষিপ্ত হয়ে ২ জন সংবাদকর্মীকে লাঞ্ছিত করে এবং ক্যামেরা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে, যার পিছনেও ইন্দন যোগান নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন ই আলম। এ নিয়ে সেখানে হট্টগোল তৈরী হলে কিছুক্ষন পর বাকি মাছ ট্রাকে তুলে পাঠিয়ে দেয়া হয় নৌ সদর থানায়। সেখানে গাড়ির পিছনে সাংবাদিকরা গেলে মাছের ট্রাকটি পাঠানো হয় সার্কিট হাউজের সামনে। সেখান থেকে কোতয়ালী মডেল থানায়। মডেল থানা পুলিশ মাছ রাখতে অস্বীকৃতি জানালে সেই মাছ পাঠানো হয় এয়ারপোর্ট থানায়। সেখানকার পুলিশও মাছের গাড়িটি ঢুকতে দেয়নি থানা কম্পাউন্ডে। এরপর সেই মাছ নিয়ে ট্রাকটি শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘুড়ে পুনরায় চলে অসে নৌ সদর থানায়। আর এই পুরো সময় সেই ট্রাকের পিছনে ঘুড়তে থাকে নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিনসহ অসহায় গরীব দুঃখিরা।
সেখানে উপস্থিত নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন বলেন, মাছ নিতে আসা মানুষের ভীড় থাকায় সঠিকভাবে মাছ দেয়া যায়নি। নৌ পুলিশ সদস্যরা মাছ নিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
মৎস্য কর্মকর্তাকে ছাড়া অভিযান চালিয়ে মাছ বিতরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মৎস ব্যবসায়ীরা বলেন, আমাদের বড় মাছ থাকায় আমরা ট্রাক আটকের খবরে পেয়ে ৯ জন ব্যবসায়ী কুয়াকাটা আলীপুর থেকে বরিশালে আসি এবং মাছ স্কেল দিয়ে মাপ দেয়ার জন্য পুলিশ কে অনুরোধ করি। কিন্তু নৌ পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের কোন কথাই শোনেননি।
সবশেষে রাত দুইটার দিকে নৌ পুলিশ সুপারের নির্দেশে ট্রাক ভর্তি সেই মাছ বিতরণ না করে নৌ সদর থানার সামেনে রেখে দেয়া হয়। জানানো হয় আজ ২৩ নভেম্বর সকালে মাছগুলো মাদ্রাসায় ও গরীব দুঃখিদের মাঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেই মাছ রাত ৮ টার দিকে নৌ সদর থানার সামনে বিতরণ শুরু করলেও অচমকা বিতরণ বন্ধ করে সেই ট্রাক হাওয়া হয়ে যায়।
এ বিষয়ে নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রসাশন ও অপারেশন) জানান, জাটকা অভিযানে ১০ ইঞ্চির নিচের মাছ জব্দ করে নিয়মানুযায়ী এতিমখানা, কারাগার সহ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বিতরন করতে হবে। নৌ পুলিশের কোন সদস্যের মাছ নেয়ার সুযোগ নেই। এমনটি কেউ করলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।