প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২০ , ১১:৪০:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল অফিস :-
বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চর গোপালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তর জাঙ্গালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় চলছে ভয়াবহ নিয়োগ বাণিজ্য। প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী এবং লেখাপড়া না থাকলেও এমপিওভুক্তির সুযোগে একের পর এক নিয়োগ-বাণিজ্য করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন মাদ্রাসার সুপার মাওলানা রুহুল আমিন ও তার দোসর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কাবুল আকন। ইতিপূর্বে এ ঘটনার সামান্য তথ্য পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে প্রকৃত অপরাধীরা। আর এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, অতিসম্প্রতি উল্লেখিত মাদ্রাসায় দপ্তরি পদে নিয়োগ দেওয়া হয় স্থানীয় সায়েদ হাওলাদারের পুত্র তারেক হাওলাদারকে। এর বিনিময়ে তারেকের কাছ থেকে গ্রহন করা হয় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু একই পদে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য ৪ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল অত্র এলাকার মানিকের বাবা কাবুল হাওলাদারের সাথে এবং অগ্রীম বাবদ মাদ্রাসার সুপার রুহুল আমিন ও সভাপতি কাবুল আকন তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মানিকের বাবা কাবুল হাওলাদার বলেন, আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েও পরবর্তীতে সেই টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে তারেক নামের অন্য একজনকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দপ্তরি পদে তারা চাকরি দেন। তিনি আরো বলেন, বিগত কয়েক মাস পূর্বে কেরানি পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সুলতানা আক্তার নামে একজনের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু এই চক্রটি কয়েকদিন পরে সুলতানাকে সেই টাকা থেকে অফিস খরচের কথা বলে ১ লক্ষ টাকা কেটে রেখে ৩ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে শাহ আলমের কন্যা জান্নাতুল ইসলাম কে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কেরানি পদে নিয়োগ প্রদান করে। বর্তমানে এই ঘটনা প্রকাশের জেরে তুমুল তোলপাড় চলছে অত্র এলাকায়। গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী জাকির বয়াতি, মুকুল বেপারী, জনি সহ বেশ কয়েকজন অত্র মাদ্রাসার সুপার রুহুল আমিনের কাছে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাদের বনভোজনের খরচ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। কিন্তু ছাত্রলীগকর্মীরা তাতে কর্ণপাত না করে ২ দিনের মধ্যে ঘুষের টাকার হিসেব দেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে চলে যায়। এ বিষয়ে চরগোপালপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির বলেন, আমি বরিশালে আছি তবে মাদ্রাসার ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি এলাকায় গিয়ে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো। অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার এর কাছে জানতে চাইলে ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি ফোন কেটে দেন। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, তিনিও এই বাণিজ্যের সাথে জড়িত। কারন নিয়োগ বোর্ডের তিনিও একজন সদস্য এবং পরীক্ষার দিন তিনি উপস্থিত না থেকেও পরবর্তীতে নিয়োগ হালাল করতে তিনি স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে চর গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল বারী মনির বলেন, বিষয়টি আমি জ্ঞাত। সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে কিন্তু কোনো প্রমাণ পায়নি এবং কেউ অভিযোগও করেনি। তবে অভিযোগ পেলে আমি অ্যাকশনে যাব। সভাপতি কাবুল আকন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পরে তার কাছে তারেক চাকরি করছে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে লাইন কেটে দেন। অপরদিকে প্রধান অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার রুহুল আমিনের কাছে নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে প্রতিবেদককে সরাসরি মাদ্রাসায় দেখা করার অনুরোধ জানান। মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পীযূষ চন্দ্র দে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না, তবে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।