প্রতিনিধি ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ , ১২:২৬:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
মজিবর রহমান নাহিদ ॥
বরিশাল নগরীতে একটি অনলাইন ওয়েবসাইটকে টিভি চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় প্রতারনার অভিযোগ উঠেছে আঃ রহিম রাজু নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নিজেকে টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তির বেশকিছু দিন পূর্বে হঠাৎ বরিশাল নগরীতে আবির্ভাব ঘটে।
মহান পেশা সাংবাদিকতায় কাজ করার স্বপ্ন দেখা মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে নগরীতে সবুজ বাংলা নামে অনলাইন টেলিভিশনের (sabujbanglatv.com) নামে কার্ড বানিয়ে প্রতারনার শুরু করে। এভাবে সে দিনের পর দিন বরিশাল নগরীসহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে কার্ড দিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর তার এসব অপকর্মের সহায়তার জন্য নগরীতে একটি প্রতারক চক্র রয়েছে। এরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর আনাচে-কানাচে। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা সহজ সরল মানুষদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে প্রতারক রাজুর কাছে নিয়ে যায় আর কার্ড বানিজ্যে সহায়তা করে।
অভিযোগের সূত্রধরে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মূলত আঃ রহিম রাজুর নামে সবুজ বাংলা অনলাইন টেলিভিশন নামে কোন টিভি চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন নেই। অথচ তিনি নিজেকে সবুজ বাংলা টিভির চেয়ারম্যান দাবী করে মানুষকে বোকা বানিয়ে অবৈধভাবে কার্ড দিয়ে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন পূর্বে প্রতারক আঃ রহিম রাজু সবুজ বাংলা নামে একটি অনলাইন পেইজ খুলে সহজ সরল মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এই পেইজটিকে টেলিভিশন নামে ব্যবহার করছে। মাঝে মাঝে সবুজ বাংলা টিভির লোগো (মাইক্রফোন) সম্বলিত একটি ক্যামেরা নিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আছে ওই চক্রের বিরুদ্ধে।
নগরীর একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানায়,‘আমরা সব জাতীয় প্রোগামই পালন করে থাকি, গত বছর সবুজ বাংলা টিভির মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা নিয়ে আমাদের অফিসে আসে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে ওই টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান লাইভ টেলিকাষ্ট করে দেওয়ার প্রস্তাব করে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করে, পরে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এটি একটি প্রতারক চক্র।’
উজিরপুরের বাসিন্দা ভুক্তভোগী নাসির উদ্দিন বালি জানান, ‘টেলিভিশনে কাজ করার কথা বলে সবুজ বাংলা টেলিভিশনের চীফ রিপোর্টারের একটি কার্ড দেয় আমাকে এবং সার্ভারের কাজ চলছে বলে আমার কাছ থেকে প্রতারক রাজু ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন রাজুর ফোনে কল করলে রিসিভ করে না।’
এছাড়া বরিশাল নগরীর চৌমাথা এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত এবং তার ছেলেসহ আরো প্রায় ১০-১৫ জনকে সবুজ বাংলার কার্ড দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক রাজু। কারও কাছ থেকে কার্ড প্রতি ১৫ হাজার, কারও কাছে ২৫ হাজার আবার কারও কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয় ভন্ড প্রতারক আঃ রহিম রাজু।
আরো জানা গেছে, প্রতারক রাজু কখনো নিজেকে ঢাকা ওয়াসার সিবিএ নেতা, কখনো বড়মাপের ঠিকাদার, এবং সবুজ বাংলা অনলাইন টিভি’র চেয়ারম্যান হিসেবে লোকসমাজে জাহির করে।
সবুজ বাংলা টিভির সরকারী অনুমোদন রয়েছে দাবী করে রাজু বলেন, ‘আমাদের সরকার অনুমোদীত অনলাইন টিভি চ্যানেল, আমি যদি কাউকে কার্ড দিয়ে থাকি সেটা আমাদের অফিসিয়াল ব্যাপার।’ তবে কার্ড বানিজ্যের ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি রাজু।
নিউজ এডিটরস্ কাউন্সিল বরিশালের সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন,‘অনলাইন পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল খুলে মানুষের কাছে কার্ড বিক্রি করা এক ধরনের প্রতারনা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন-পুলিশ প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো উচিত যে কারা প্রকৃত সাংবাদিক এবং কারা সাংবাদিকতার নামে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।’
এব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, এরকম কাজ অন্যায়, যদি কেউ সুনিদিষ্ট অভিযোগ করে তাহলে নিশ্চিই ব্যবস্থা নেয়া হবে।