প্রতিনিধি ২১ জুন ২০২২ , ৬:২৫:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বেড়িবাধের কাজের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর এই অনিয়ম নিয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও এর কোন সূফল পায়নি বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। আর এই প্রতিবাদের ফলে হয়রানিও হয়েছেন তারা।
সূত্রে জানা যায়, কীর্তনখোলা নদী থেকে চরবাড়িয়াকে রক্ষায় ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। যারই ধারাবাহিকতায় চরবাড়িয়া বেড়িবাধ নির্মাণের জন্য পৃথক দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১৭৯৮ ও ৫৮৯৭ ফুট দূরত্বের দুটি প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৬০ লক্ষ টাকা। কাজটি পায় পটুয়াখালীর ঠিকাদার মিজানুর আলম। কিন্তু কাজটি ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাক্ট নেয় চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবীদার শহিদুল ইসলাম ওরফে ইতালি শহীদ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে গত বছরের জুন মাসে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বেড়িবাধ প্রকল্পের কাজটি পেয়েই নিজের ইচ্ছেমত কাজ শুরু করেন ইতালি শহীদ।
অভিযোগ রয়েছে, ইতালি শহিদের নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজেদের ইচ্ছেমতো যেখান থেকে খুশি সেখান থেকেই মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। আর এর মধ্যে রয়েছেন কারো কবরস্থানের মাটি, কারো ব্যক্তিগত জমির মাটি, কারো বাড়ির চলাচলের রাস্তা! এছাড়া এই বেড়িবাধ নির্মাণ করতে গিয়ে অনেকের ব্যক্তিগত কয়েকশ’ গাছ ভেকু দিয়ে উঠিয়ে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মীর ইউনুছের স্ত্রী জানান,‘আমাদের বাড়ি থেকে মাটি এমনভাবে কাটছে, আমার উঠানের অর্ধেক পর্যন্ত ফাঁটল ধরছে, পরবর্তীতে সবই পড়ে যাবে। আমাদের গাছ-গাছালি অনেক গ্যাছে, নদী ভাঙ্গলডাও কাছাকাছি আমরা এহন অনেক সমস্যার মধ্যে আছি। এহানে যে পরিমান ক্ষতি হইছে এহন আমি যে অন্য জায়গায় যাইয়া বাড়ি করমু হেই সামর্থও আমার নাই। আমাগো এমপি সাইবের কাছে জোড় দাবী জানাই আমাগো যে ক্ষতি হইছে এর যেন একটা সুষ্ঠ সমাধান তিনি করেন। আমরা এই আশায় আছি এহন।’
হাসিনা বেগম নামে এক বৃদ্ধা জানায়,‘আমার ঘরের ভিটা ছাড়া কোন জমি নাই, অন্যের বাড়ি কাজ করে খাই। আমি মাটি দিতে পারিনাই তাই মাটির বদলে আমার কাছে টাকা চাইছে। আমার স্বামী পঙ্গু মানুষ, হাতে রড ভরা, খুব কষ্টে দিন কাটাইতে আছি আমরা, কোন বেলা খাই-আবার কোন বেলা না খাইয়া থাহি। হ্যাগো টাকা দিতে পারিনাই দেইখ্যা আমার বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা না কইরাই চইলা গ্যাছে।’
ববার কবর বাঁচাতে আকুতি জানিয়ে শাহিনুর নামে এক নারী জানান,‘আমার বাবার কবরের মাটিও তারা কেটে নিতে চেয়েছিলো। এতে আমরা বাঁধা দেই। তারপরই কবরের চারপাশদিয়া মাটি কাইট্যা নিয়া গেছে। কবরে এখন ফাটল ধরছে, যেকোন সময় কবরটা ভেঙ্গে যেতে পারে। ঠিকাদারের লোকেগো কাছে এতো আকুতি জানাইলাম আমার বাবার কবরডা রক্ষায় কিন্তু তারা কেউ ই আমাগো কথা শুনলো না।’
স্থানীয় মিজানুর রহমান জানান,‘রাস্তা উন্নয়নের কাজ করার সময় ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি যার খাজনাও দেই আমরা, রাস্তাটা আমার জমির উপর দিয়ে গেছে, আমার সেই জমিতে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকার গাছ ছিলো, গাছ গুলো নষ্ট করে ফেলেছে যা বিক্রি করার মতো কোন উপায় নেই। জনগনের স্বার্থের জন্য আমি জমি ছেড়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরন পায় নি।’ রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার কাজের জন্য যে ভেকু ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ভেকু দিয়ে এমনভাবে মাটি কাটা হয়েছে, গভীরতা ও গাছপালা কাটার কারনে পাড় ধরে রাখা সম্ভব না। ইতিমধ্যে সিংহভাগ রাস্তায়ই ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের কাছে আমাদের আকুল আবেদন যাতে তিনি বিষয়টি নজরে নিয়ে দ্রুত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাদের এই দূর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করেন।’
কাজের অনিয়মের কথা স্বিকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন আকন বলেন,‘রাস্তার কাজে বেশ কয়েকজায়গায় কাজ হস্তান্তর করার আগেই ফাটল ধরেছে। কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে স্থানীয়রা ঠিকাদারের লোকজনের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সুষ্ঠ সমাধান হয় নি।’
অনিয়মের কথা স্বিকার করেছেন ক্ষোদ ইউপি চেয়ারম্যান নিজেও। চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ বলেন,‘ইতালি শহিদ এবং ইসমাইল প্যাদারা মিলে ওই কাজটি করেছে বলে আমি শুনেছি। কাজের পুরোটাই অনিয়ম করেছে, কাজের নামে এরা লুটপাট করে খাচ্ছে।’
এব্যাপারে ঐ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল আজকের তালাশকে জানান,‘রাস্তায় যদি কোথাও ফাটল ধরে থাকে কাজ শেষ হওয়ার পূর্বে পুনরায় সেই রাস্তা করে কাজ হস্তান্তর করতে হবে। এই কাজে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই।’ অনিয়ম হলে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ৩০ জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে তবে কাজ শেষ হওয়ার মাত্র ৮দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত মানসম্মত কাজ চোখে পড়েনি।