প্রতিনিধি ১৯ জুন ২০২৩ , ৮:২১:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
তুফান মাহমুদঃ সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছের উৎপাদন ও প্রজননবাড়াতে গত (২০ মে) মধ্যরাত থেকে শুরু করে (২৩ জুলাই) রাত ১২ টা পর্যন্ত ৬৫ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা বহালথাকবে।
নিশেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়। সহায়য়তা পাওয়ার পরেওস্বাভাবিক দিনের মতো সাগরে মাছ শিকার করছেন জেলেরা। এমন অভিযোগের সূত্র ধরে সাগরকন্যা কুয়াকাটায়ছুটে যান আজকের তালাশের অনুসন্ধানী টিম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট–বড় ট্রলারে অবাধে মাছ শিকার করছে জেলেরা। প্রশাসন উপস্থিত থাকা অবস্থায়তাদের সামনে সাগর থেকে নৌকা তোলা ও মাছ অটো গাড়ির মাধ্যমে নিয়ে জেতে দেখা জায়। আর প্রতিদিন ঢাকা–কুয়াকাটা প্রতিটি পরিবহনে বোঝাই করে মাছ নেয়া হচ্ছে। ছোটো বড়ো ট্রাকেও জাচ্ছে মাছ।
ক্ষুদ্র জেলেদের সংগঠন কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্য জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বিরুদ্ধেঅভিযোগ থাকলেও তিনি জানান গদির মালিক নুর জামাল সব জানে। আর এই নরজামাল বাহিনির নেতৃত্বে ৬৫দিনের নিষেধাজ্ঞায় ১ হাজার টি খুটা জালের ট্রলারে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ শিকার করা হচ্ছে।তাদেরকে লেম্বুর বন থেকে গঙ্গামতী ধোলাইপার পর্যন্ত মাছ শিকার করতে ট্রলার প্রতি ৫০০০ টাকা করে উৎকোচদেওয়া হয়। এতে করে কমপক্ষে ১ হাজার ট্রলার থেকে উত্তোলন করা হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।
অপরদিকে আলিপুরের লম্বা জালের ১ হাজার টি ট্ররার থেকে ১০ হাজার করে আলিপুর বন্দর মৎস্য সমবায়সমিতির নামে ১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়।
কুয়াকাটা ও মহিপুরের ১০ থেকে ১২ টি বরফকল এই নিষেধাজ্ঞায় সচল রয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্তবরফকল চলমান রাখতে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা করে প্রায় ২০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। আর এই পুরোটাকা মহিপুর নৌ–পুলিশ, মৎস্য কর্মকর্তা, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও কিছু স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরভিতরে ভাগ করে দেয়া হোয়েছে বলে জানান বেশ কিছু জেলে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বরফকল মালিক বলেন– কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসে নিষেধাজ্ঞার সময়বরফকল চালু রাখার কথা বলে ২ লাখ টাকা নিয়েছে। এতে আমরাও খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।
গঙ্গামতী নদীতে মাছ শিকারে থাকা একাধিক জেলেরা জানান, আমরা নিষেধাজ্ঞায় মাছ শিকার করে অধিকটাকায় বিক্রি করতে পারছি। নিজাম শেখ ও নুর জামাল ভাই ৫০০০ টাকা করে নিছে তাতে আমাদের তো কোনক্ষতি নাই। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে মাছে লাভও বেশি হয় এবং প্রশাসনের দিক দিয়েও কোন হয়রানি করা হয় না।
কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্য জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ বলেন– জেলেরা সমুদ্রের কিণারেমাছ ধরে। তবে টাকা–পয়সার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। বিষয়টি গদির মালিক নুর জামাল জানে।
এ বিষয়ে গদির মালিক নুর জামাল বলেন– ভাই যা শুনেছেন সব মিথ্যা। আমি কোন টাকা নেইনি। আরপ্রশাসনকে টাকা দেইনি। আমার কাজ আছে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
আলিপুর বন্দর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি ও আলিপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আনছার মোল্লা বলেন– এখানেনৌ–পুলিশ, কোষ্টগার্ডসহ সকল প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় থাকায় জেলেরা নদীতে মাছ ধরে। তারা কেউ সমুদ্রে যায়না।
কুয়াকাটার পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন– নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন নিবন্ধিত জেলেদের সঠিকভাবে চালবিতরণ করা হয়েছে। আমি ঢাকায় থাকায় বিষয়টি জানা নেই। আমি এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম বলেন– নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের চোখের ঘুম হারাম হয়েযায়। দিন রাত কাজ করতে হচ্ছে। লোকবল ও নৌযান সঙ্কট থাকায় অভিযান পরিচালনা করতে কষ্টসাধ্য হচ্ছে।তারপরেও আমরা যথা সাধ্য কাজ করে যাচ্ছি।