বরিশাল কোস্টগার্ডের মাঝি রফিকের খুটির জোড় কোথায় ? এমনটি প্রশ্ন উঠেছে জেলে পাড়ায়। সংবাদকর্মীদের কাছে হাতেনাতে অবৈধ কারেন্ট জালসহ রফিক ও তার সহযোগী সালাউদ্দিন ওরফে সালু ধরা খেয়ে নানা তদবিরে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানাযায়, বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কোস্টগার্ডের ভাটারখাল অফিসের পাবনা জাহাজ থেকে মাঝি রফিক ও তার দুইসহযোগী সালাউদ্দিন সালু কোস্টগার্ডের ডিউটি শেষ করে চরকাউয়া খেয়াঘাটে ট্রলার থামায় । তার কিছুক্ষন পর সালু একটি ছোট নৌকা নিয়ে ট্রলারে থাকা অবৈধ এক বস্তা কারেন্ট জাল নিয়ে চরকাউয়ার মাছ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে । পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সালু ও রফিক ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরর্বতিতে সাংবাদিকরা তাদের ফলো করে চরকাউয়া খেয়াঘাটে যায় অনুসন্ধান করেন। পরে ওই ঘটনার মাছ ব্যবসায়ী শহিদুলকে জালসহ হাতেনাতে ধরে সাংবাদিকরা। তবে শহিদুল প্রথমে নিজেকে বাঁচাতে সাংবাদিকদের ম্যানেজে ব্যস্ত হয়ে পরেন। অভিযানের সময় ওই স্থানে কোস্টগার্ডের সাবেক ১মাঝি ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে শহিদুলের দোকান থেকে রফিকের দেয়া কারেন্ট জাল বের করা হয়। অপরদিকে শহিদুলের সাথে সাংবাদিদের কথাকাটাকাটি হলে এক পর্যায় তিনি রফিকের সহযোগী সালুর নাম বলে দেয়। যার পুরো ভিডিও ও অডিও তথ্য প্রমানসহ সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে। শহিদুলের কাছ থেকে স্বিকারউক্তি নেয়ার ১৫মিনিটের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে ঘটনাস্থলে হাজির হন কোস্টগার্ড মাঝি রফিক । পরে সাংবাদিক ম্যানেজে প্রস্তাব দেয়। যার অডিও রেকড প্রমানিত রয়েছে।
তবে জেলেদের দাবি মাঝি রফিক জাল প্রতিদিনই বিক্রি করে। কিন্তু সে এত জাল কোথায় থেকে পায় ? এমনটি প্রশ্ন জেলে পাড়ায়। আর নানা অপরাধের সাথে জড়িত থেকেও গত সাড়ে ৪বছর যাবৎ কোস্টগার্ড মাঝি হিসাবে কর্মরত রয়েছে। তাছাড়া রফিক মাঝির সহকারী সালু ওরফে সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার স্বিকার করে বলেন, ভাই আমি জাল বিক্রি করি নাই। আমি রফিকের কর্মচারি। রফিক যেভাবে বলবে আমি সেভাবেই করেছি। শুধু শুধু আমার নাম আসছে।
একটি সূত্রে জানায়ায়, গত ৩ই জানুয়ারী একাধীক পত্রিকায় কোস্টগার্ডের নামে রফিক মাঝির চাঁজাবাজী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে সাথে সাথে মাঝি রফিককে বহিস্কার করেন তৎকালীন কোস্টগার্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা (দক্ষিন) জোনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হামিদুল ইসলাম। বহিস্কারের কয়েক মাস পর রফিক অদৃশ্য এক ক্ষমতায় পুনরায় আবার কোস্টগার্ডে মাঝি হিসাবে নিয়োগ পায়। তবে রফিক মাঝি এমন অপকর্ম ধামাচাপা দিতে প্রশাসনের একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। বার বার অপরাধ করেও কোস্টগার্ডের মাঝি হিসাবে বহাল রয়েছে মাঝি রফিক।
এবিষয় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহকারী পরিচালক (গোয়েন্দা) হামিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কোস্টগার্ডের নাম ব্যবহার করে কেউ ফায়দা লুটবে সেটা হবে না। কারন বর্তমান সময় কোস্টগার্ড বিভিন্ন স্থানে ইমেজ নিয়ে কাজ করছেন। আর সেই ইমেজ নষ্ট করার জন্য মাঝিরা বা অন্য কোন অসাধু চক্রের সদস্য ক্ষুন্ন করবে সেটা হবে না। কেউ যদি কোস্টগার্ডের নাম ব্যবহার করে আর অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত থাকে বা এরকম কাজের সাথে জড়িত থাকে তা হলে তাদের কে প্রশাসনের হাতে তুলে দিবে বলে সাধারন জনগনের কাছে আশাবাদী তিনি। আর সেই সাথে তিনি আরো বলেন, রফিকের বিষয়টি তদন্ত চলছে । সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সাধারন জেলেদের লিখিত অভিযোগে জানাযায়, রফিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি সহ অবৈধ কারেন্ট জাল ও রেনুপোনা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে তথ্য অনুসন্ধানীতে জানাযায়, “কোস্ট গার্ড এ্যাক্ট ১৯৯৪ সালে জাতীয় সংসদে পাশ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠন করা হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে একটি আধা সামরিক বাহিনী হিসাবে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা, তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল এবং বিভিন্ন নদ নদীতে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও নিভ্ররতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। কোস্টগার্ডের সদস্যদের দক্ষতায় আজ বাংলাদেশ কোস্টগার্ড উপকূলীয় অঞ্চলে একটি আস্থা ও নিভ্ররতার প্রতীক হিসাবে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯০ ভাগের ও বেশী পণ্যের আমদানী ও রপ্তানী সমুদ্র পথে হয়ে থাকে। তাই আমদানী ও রপ্তানী কাজে ব্যবহৃত সকল প্রকার দেশী ও বিদেশী জাহাজ সমূহের নদী ও সমুদ্রপথে নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে তথা দেশের অর্থনীতির প্রবাহ অব্যহত রাখতে কোস্টগার্ডে সক্রিয় ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। আর্ন্তজাতিক নিয়ম অনুসারে সমুদ্রতীর হতে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত টেরিটোরিয়াল সী এলাকা এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এর সকল এলাকায় অধিকার সমূহ সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী জনগণের মূল জীবিকা এবং রপ্তানী আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উপর নিভ্ররশীল। এছাড়া বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল ও অন্যান্য বহু অনাবৃস্কর খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এ সকল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ রক্ষায় কোস্টগার্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান ও দীর্ঘ ৭১০ কিঃ মিঃ সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থাকায় সমুদ্র ও নদী পথে চোরাচালান বেশী হয়ে থাকে। এসব রোধকল্পে কোস্টগার্ড গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে । তাছাড়া দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দরে আগত বিদেশী ও দেশী জাহাজসমূহের নিরাপত্তা প্রদান, সুবিশাল সুন্দরবনের পর্যটক, মৌয়াল, চিংড়ি চাষী, জেলে ও অন্যান্য জনগনের নিরাপত্তা প্রদান করে কোস্টগার্ড দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জম্মলগ্ন থেকে জলোচ্ছ্বাস, ঘূণিঝড়, সুনামি ও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় উপকূলীয় জনগনকে সার্বিক সহায়তা এবং ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহন করে সর্বমহলে প্রশংশিত হয়েছে। তাই জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোস্টগার্ডের অবদান অপরিসীম। একটি সূত্র জানায়,সমুদ্র সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জলসীমায় কোস্ট গার্ডের সক্রিয় উপস্থিতি ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড শুভ সূচনা হয়। বঙ্গোপসাগর বিধৌত নদী-মাতৃক বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন বিভিন্ন নদ-নদী এবং বিশাল সমুদ্রের নিজস্ব এলাকা ব্যবহারের মধ্যে নিহিত। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যথোপযুক্ত সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে কোস্টগার্ডের ভূমিকা পালন করে আসছিল। বেসামরিক প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনাধীন আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর আওতাভূক্ত না হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার জানমালের নিরাপত্তাসহ সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে একটি পৃথক সামুদ্রিক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রফিকের বিরুদ্ধে আরো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থাকছে আগামী পর্বে।