প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:২৬:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ গতকাল বরিশাল নগরীর ডিসিঘাটে নিষেধাজ্ঞার জব্দকৃত মা ইলিশ কাড়াকাড়ির দৃশ্য চোখে পড়েছে। জব্দকৃত মাছের কিছু অংশ স্থানীয় জনতাকে দিলেও এর বড় একটি অংশ থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ, আনসার ও জেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। তবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে এদেরকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা।
গতকাল (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে নগরীর ডিসিঘাটে কয়েকটি স্পিড বোট ভর্তি করে ইলিশ মাছ নিয়ে আসা হয়। এ সময় সেই মাছ গরীব দুঃখি মানুষের মাঝে বিরতণ করতে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোহেল মারুফ ও সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অংছিং মারমা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- এসআই সঞ্জয় দে একটি ব্যাগে ভর্তি করে ইলিশ মাছ নিচ্ছে। সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে মাছ নিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সংবাদকর্মীরা তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই বলে দাবি করে চলে যান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনের পিওএম শাখায় কর্মরত রয়েছেন। এরপর একটি ব্যাগে মাছ নিতে আসেন নৌ সদর থানা এএসআই সরোয়ার, তিনি মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় সংবাদকর্মীদের সামনে পড়েন। এ সময় সংবাদকর্মীরা ব্যাগে কি আছে জানতে চাইলে তিনি মাছ রেখে পালিয়ে যান। এরপর সেই মাছ স্থানীয়রা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। পরক্ষণেই মাছ নিতে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোহেল মারুফের ড্রাইভার হাসান। তিনি একটি ব্যাগে বড় সাইজের বেশ কিছু ইলিশ মাছ একটি হোটেলের মধ্যে রেখে দাড়িয়ে থাকেন। তখন সংবাদকর্মীরা কার মাছ জিজ্ঞেস করলে হাসান বলেন- এগুলো এডিসি মোঃ সোহেল মারুফ স্যারের মাছ। আপনারা মাছ নিতে পারেন কিনা সংবাদকর্মীদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে মাছ নিয়ে চলে যান।
সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা যায়- মাছ নিয়ে একটি গাড়িতে ঘুড়ছেন আনসার ব্যাটেলিয়নের একটি টিম। খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা সেই গাড়িটির পিছু নিলে উপায়ান্ত না পেয়ে গাড়িটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মধ্যে যান। তখন গাড়ি থেকে নেমে আসেন প্লাটুন কমান্ডার আশ্রাফ। মাছ কোথা থেকে আসলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- জেলা নেজারত মজিবর ভাই আমাদের মাছগুলো দিয়েছেন। অনেক কষ্ট করে ডিউটি করি। আপনারা দয়া করে সংবাদ প্রকাশ করবেন না। এরপর একটি মোটর সাইকেলে করে মাছ নিয়ে যেতে দেখা যায় নেজারত শাখার জিলহজকে। মাছ কোথায় পেল এমন প্রশ্ন করা হলে হন্তদন্ত করে মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যান তিনি।
ডিসিঘাট মসজিদের ঈমামের নাম করে মাছ নিয়ে যাচ্ছিলেন ডিসিঘাট দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন। মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের রোষানলে পড়েন তিনি। তখন সংবাদকর্মীরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে জানতে চান মাছ কার, জবাবে তিনি বলেন ডিসিঘাট মসজিদের ঈমামের। তার (ঈমামের) মাছ আপনি নিচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- আমাকে মাছ নিতে বলেছেন ঈমাম সাব। তাৎক্ষনিক ওই মসজিদের মোয়াজ্জিনকে কল করে সাংবাদিকদের ধরিয়ে দেন তিনি। ওপার থেকে ডিসিঘাট মসজিদের মোয়াজ্জিন পরিচয় দানকারী ওই ব্যক্তি বলেন- মসজিদের জন্য কাউকে মাছ আনতে বলা হয় নি। নাসির ভাই আমার কাছ থেকে কয়েকটি রশিদ চেয়ে নিয়েছিলেন। এছাড়া মাছের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
পরক্ষনের একটি ট্রেতে করে মাছ নিয়ে বের হন নেজারত শাখার শাকিল। এ সময় স্থানীয়রা ঘিড়ে ধরে তাকে। উপায়ান্ত না পেয়ে ট্রেটি মাটিতে ফেলে চলে যান তিনি। পরে মাছগুলো কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যায় স্থানীরা। এরপর একটি বস্তায় মাছ নিয়ে বের হন দুই যুবক। তাদেরকেও আটকান স্থানীয়রা। এ সময় তারা চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে এই মাছ ডিসি স্যারের, এই মাছ ডিসি স্যারের। কিন্তু তাদের আর শেষ রক্ষা হলো না। সে মাছগুলোকে স্থানীয়রা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।
এর কিছুক্ষন পর খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ছুটে যান মুক্তিযোদ্ধা পার্কের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান নেজারত শাখার শুভ সাইকেলে একটি ব্যাগের ভেতর কয়েকটি মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। তখন সংবাদকর্মীদের দেখে তাৎক্ষনিক সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অংছিং মারমাকে কল করে ধরিয়ে দেন। ওপার থেকে তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে শুভকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং সংবাদকর্মী নাম পরিচয় জেনে তাকে অফিসে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোহেল মারুফ বলেন- কারা কারা এমন কাজ করেছে আমাকে তথ্য দিন। আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম বলেন- বিষয়টি আমি জানার পরে জেলা প্রশাসনের কর্মচারীদের কাছ থেকে মাছগুলো উদ্ধার করে গরীব দুঃখিদের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছি। আর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’