অপরাধ

চরমোনাইতে দুলার হয়রানি থেকে বাঁচতে চায় কালাম!

  প্রতিনিধি ৭ জুন ২০২৪ , ১২:১৩:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজাচর গ্রামে ৯৭ শতাংশ জমি কিনে বিপাকে পড়েছেন চার ব্যাক্তি। জমির পাশে দিবাকর রায় দুলা নামের এক প্রভাবশালী হিন্দু পরিবারের বাড়ি হওয়ায় সেই জমিতে নির্মাণ বা সংস্কার কাজে বিভিন্নভাবে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে জমি ভুক্তভোগীদের দখলে থাকলেও ভোগ করতে পারছে না তারা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে ও থানা পুলিশের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশ বৈঠক করা হলেও কোন সিদ্ধান্তই মানতে নারাজ দিবাকর রায় দুলা গংরা।

ভুক্তভোগীরা হলেন- চরমোনাই ইউনিয়নের ডিংগামানিক গ্রামের আবুল কালাম হাওলাদার, তার স্ত্রী বিলকিচ বেগম, মেয়ে আয়শা আক্তার ও চরমোনাই গ্রামের রুহুল আমিন খন্দকার। অভিযুক্তরা হলেন- রাজাচর গ্রামের মৃত দেবন্দ্রনাথের ছেলে দিবাকর রায় দুলা, ওপেন ধোপার ছেলে উজ্জল ধোপা ও সুমন রায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিবাকর রায় দুলা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী ও হিন্দু ধর্মের হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। সংস্কার ও নির্মান কাজে গেলে মন্দির ও মঠ ভেঙে হয়রানিসহ বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে স্বার্থ হাসিল করবে বলে হুমকি দিয়ে দাবিয়ে রাখছেন ভুক্তভোগী মুসলিম পরিবারকে। ফলে ভুক্তভোগীরা ভিত হয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি ও থানা পুলিশের দারস্ত হলেও মিলছে না সুরাহা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়- মৃত দেবন্দ্রনাথের ছেলে মৃত দিলিপ কুমার রায় রাজারচর মৌজার ৯১ নং জে.এল, ১৯৫২ নং এস.এ খতিয়ানে ১৬, ১৯, ২০ ও ১০৪ নং দাগে সাফ কবলা দলিলে ১৩৬ শতাংশ জমির মালিক। সে জীবিত থাকতে সেখান থেকে ৯৭ শতাংশ জমি আবুল কালাম হাওলাদার, বিলকিচ বেগম, রুহুল আমিন খন্দকার ও আয়শা আক্তারের কাছে বিক্রি করে দখল বুঝিয়ে দেন। বাকি জমির ৫ শতাংশ নিজে রেখে ৩৪ শতাংশ জমিও অন্য মানুষের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর দিলিপ কুমার রায় মৃত্যুবরণ করলে আবুল কালাম গংদের জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি পরে দিবাকর রায় দুলা গংদের। সেই জমি বাগিয়ে নিতে শুরু হয় নাটকীয়তা। প্রথমে ওই জমি ক্রয়ের বায়না ধরেন দিবাকর রায় দুলা গংরা। আবুল কালাম গংদের কাছে জমি ক্রয়ের প্রস্তাব দেন দিবাকর রায় দুলা গংরা। আবুল কালাম গংরা রাজি হলে তাদের ক্রয়কৃত দাম দিতে চান দিবাকর রায় দুলা গংরা। কিন্তু জমির দলিল করার বাড়তি খচর দিতে রাজি না হলে তাদের কাছে জমি বিক্রি করবেন না বলে জানান আবুল কালাম গংরা। এরপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আবুল কালাম গংদের। ওই জমির কাছে গেলেই নানান ভয়ভিতি দেখান দিবাকর রায় দুলা গংরা। এ নিয়ে স্থানীয় গন্যমান্যদের দারস্থ হয়ে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেন আবুল কালাম গংরা। কিন্তু কোনভাবেই রাজি হননি দিবাকর রায় দুলা গংরা। তাদের দাবি- কম দামে জমি বিক্রি করতে হবে, নয়তো অন্য দাগে বাড়ির পিছনের জমি নিতে হবে আবুল কালাম গংদের। দিবাকর রায় দুলা গং যেখান থেকে জমি দিতে চান তার দাম কম ও যাতায়াতের সু-ব্যাবস্থা না থাকায় ওই জমি নিতে রাজি হন না আবুল কালাম গংরা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ মার্চ আবুল কালাম গংদের জমি জোড়পূর্বক দখলে নিতে ঘর নির্মাণ করতে যায় দিবাকর রায় দুলা গংরা। তখন আবুল কালাম গংরা ঘর নির্মাণে বাঁধা দিলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার পাশাপাশি মন্দির ও মঠ ভেঙে হয়রানিসহ বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রূপ দিবে বলে হুমকি প্রদান করেন দিবাকর রায় দুলা গংরা। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন আবুল কালাম হাওলাদার। যার নং ১৬৮৩ (তারিখ ২৫-৩-২০২৪ )। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার সিদ্ধান্ত নিলেও তা মানেননি দিবাকর রায় দুলা গংরা।

এ বিষয়ে আবুল কালাম গংরা বলেন-  আমরা দিলিপ কুমার রায়ের সাফ কবলা দলিল মূলে মালিকানাধীন ১৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৯৭ শতাংশ জমি ক্রয় করি। জমি রেজিস্ট্রি করে আমরা দখলে যাই। তখন কেউ বাঁধা দেয়নি। দিলিপ কুমার রায়ের মৃত্যুর পরেই ওই জমি দখলের পায়তারা শুরু করেন দিবাকর রায় দুলা গংরা। প্রথমে জমি ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। তখন আমরা রাজি হই। তিনি শুধু জমির ক্রয়কৃত মূল্য দিতে রাজি হন তরা। দলিল করার খরচ দিতে রাজি হন নি। এরপর অন্য দাগে বাড়ির পিছনের কম দামি জমি ও যাতায়াতের সু-ব্যাবস্থা নেই এমন একটি জমি আমাদের দেয়ার প্রস্তাব দিলে আমরা রাজি হইনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে আমাদের হয়রানি শুরু করে তারা। এমনকি ওই জমিতে গেলে প্রাণ নাশের ও ওই বাড়ির মন্দির-মঠ ভেঙে আমাদেরকে হয়রানিসহ বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রূপ দিবে বলে হুমকি প্রদান করেন।

তারা আরও বলেন- ওই জমি দখলে নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে নানা কুট-কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে দিবাকর রায় দুলা গংরা। ক্ষমতার দাপট ও বিষয়টি সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে আমাদের ক্ষতির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। কারো কথার কর্ণপাত না করে ওই জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। আমরা ক্রয়কৃত জমি ভোগ দখল ও দিবাকর রায় দুলা গংদের কুট-কৌশল থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে দিবাকর রায় দুলা বলেন- ওই জমি আমাদের পূর্ব-পুরুষদের। আমার ভাই বাবার কাছ থেকে জমি কিনে নিয়ে মালিক হয়েছেন। আমার ভাই যখন ওই জমি বিক্রি করবে তখন আমরা আবুল কালাম গংকে কিনতে নিষেধ করেছিলাম। যেহেতু ওটা আমাদের বাপ-দাদার জমি তাই আমরাই কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবুল কালাম গংরা আমাদের না জানিয়ে জমি কিনে নেয়।

আবুল কালাম গংরা যে জমি ক্রয় করেছে সেই জমি তারা পাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- অবশ্যই পাবে, তারা জমি পাবেনা সে কথা আমি কোথাও বলিনি। কিন্তু আমি জমিটি কালামের কাছ থেকে কিনে নিতে চাই কালাম আমাকে দিতে চায় না। আপনার আর কিছু জানার থাকলে আমাদের বাড়িতে আইসেন সামনাসামনি কথা বলবো বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আরিচুল হক বলেন- আবুল কালাম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেছিলেন। এরপর সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধিন।

আরও খবর

Sponsered content