প্রতিনিধি ৮ মে ২০২২ , ৯:১০:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
১৮কিলোমিটার জুড়ে সমুদ্র সৈকতসহ নানা দর্শনীয় স্থান রয়েছে কুয়াকাটায়। ঈদ-ঊল-ফিতরকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটা এখন মুখরিত হাজার হাজার পর্যটকের ভিড়ে। কিন্তু এই ঈদকে কেন্দ্র করে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুয়াকাটার দেহ ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। এখানে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক ও নারী! পৌরসভাসহ আশে-পাশের ইউনিয়নগুলোতে কয়েকশ স্পটে চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। আলিপুর, কালাচান পাড়া, আমখোলা পাড়া, মিশ্রি পাড়া, রাখাইন মার্কেট মাদক বিক্রির উল্লেখযোগ্য স্পট। এছাড়াও বিভিন্নস্থানে মাদক বিক্রি হয়ে থাকে, এসব স্থানগুলো অনেকটা ওপেন সিক্রেট!
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় অনেকটা নির্বিঘ্নে মাদক কেনাবেচা ও পতিতা ব্যাবসা করছে কারবারিরা, গড়েছে টাকার পাহাড়। মাঝেমধ্যে দু-চারজন দালাল গ্রেফতার হলেও নেপথ্যের গডফাদাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে হতাশা প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলছে, মাদক ও নারীর ছোবলে যুবসমাজের একাংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির একটা বড় অংশ মাদকে আসক্ত। এছাড়া নামধারী সাংবাদিক ও নামধারী কিছু নেতারা এই মাদক ও দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন ইয়াসিন, আক্কাস, ইমাম, আরিফ, হারিসসহ আরও অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অবৈধ এসব কর্মকান্ডের জন্য।
কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায়, হাজার হাজার লোক আসেন এখানে ঘুরতে। তার ভিতরে অনেকেই যায় মাদক ও নারীর লোভে। কারন মাদক আর নারীর জন্য কুয়াকাটা এখন নিরাপদ স্থান! অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুয়াকাটা বিজ লাগোয়া বেশ কয়েকটি স্পটে মাদকের কারবার কম করে হলেও শতাধিক। ইয়াবা, গাজা ও চোলাই মদের (মহুয়া) বড় আখড়া এই এলাকা। এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার চোলাই মদ বিভিন্ন হোটেলে যায় বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়। শুধু মাদকই নয় কুয়াকাটা বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে এখন পতিতা ব্যবসা চলছে। যেসব হোটেলে পতিতা ব্যবসা চলছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, হোটেল রেডিসন, হোটেল এ আর খান, হোটেল ডলফিন ও হোটেল রনি, হোটেল পায়রা, হোটেল ঝিলিক ও হোটেল নিরালা। মূলত এসব হোটেলে থাকা নারীদের দিয়েই বিভিন্ন হোটেলে এই পতিতা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন দালালরা।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলে এই পতিতা ব্যবসা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব হোটেলের কোনটিতে মালিক আবার কোনটিতে ম্যানেজার সরাসরি পতিতা ব্যবসার সাথে জড়িত। হোটেল ঝিলিক ও হোটেল নিরালার মালিক লিয়াকতের নামে কয়েকদিন পূর্বে অবৈধ এই কাজের জন্য একটি মানবপাচার মামলা হয়। এছাড়া এই ব্যবসার সাথে জসিম, অটো ছালাম, অটো হাসান, কবির, মাহাতাব, মনির সহ একটি বিশাল সিন্ডিকেট যুক্ত রয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক হোটেল ম্যানেজার এই প্রতিবেদককে জানান,‘আগের মতো এখন আর হোটেল ব্যবসা নাই, আর অনেকেই হোটেলে এসে নারী চায় তাই তাদের মাঝে মধ্যে একটু আপ্যায়ণের ব্যবস্থা করি এই আর কি।
এতে একটু দু-পয়সা বেশি ইনকাম হয়। আর ঈদের মৌসুমে পর্যটক বেশি থাকে, তাদের চাহিদা বিভিন্ন রকমের। তারা যদি চায় তাহলে ব্যবস্থা করে দেই।’ কুয়াকাটার একাধিক সতেচন মহল জানান,‘মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য এই সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ঘুরতে আসেন, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক দুষ্ট প্রকৃতির লোক মাদক ও পতিতা ব্যবসা করছেন। এর কারনে আমাদের যুবসমাজ ধংসের পথে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া।’
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানান, বরিশাল থেকে সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা সহ সমাজের বৃত্তবান এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা প্রায়ই জুয়া, মাদক ও নারীলোভে কুয়াকাটা যেয়ে থাকেন এবং তারা কুয়াকাটার একটি বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করে থাকেন। বরিশালের স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক ও দুইজন ব্যবসায়ী ওই অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রন করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রায়ই বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সহ কয়েকটি স্থান থেকে ভাড়ায় চালিত হাইয়েক্স গাড়িতে কুয়াকাটা যায় এবং সারারাত সেখানে অবস্থান করে আবার দিনে বরিশাল ফেরত আসেন।