অপরাধ

চরবাড়িয়ায় ভূমি অফিসের জমিতে বহিস্কৃত নেতার অফিস!

  প্রতিনিধি ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ , ৭:৫০:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক: বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের তালতলী বন্দরে উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। তিন মাস আগে কাজ শেষ করে তা হস্তান্তর করেন গণপূর্তর ঠিকাদার মিজানুর রহমান। তবে কাজ শুরুর সময় মসজিদের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জমিতে তিনি একটি আধাপাকা ভবন নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হলে নিজ জিম্মায় ওই ভবনটি সরিয়ে নেবেন এমন শর্তে তা নির্মাণ করেছিলেন ঠিকাদার মিজানুর রহমান।

 

তবে কাজ শেষ হওয়ার পরে দেখা গেল উল্টো চিত্র। গণপূর্ত ঠিকাদার মিজানুর রহমান ভূমি অফিসের জমিতে করা তাঁর আধাপাকা ভবনটি ভাড়া দিয়ে দিল জেলা পরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল ইসলাম ওরফে ইটালি শহীদের কাছে। আর ভাড়া নিয়ে ওই ভবনটিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের একটি সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন তিনি।

 

ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে মৌখিক নোটিসে ওই ভবন সরিয়ে নেয়ার জন্য বললেও তিনি তা কর্ণপাত করছেন না।

 

ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুস সালাম আকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণকারী ঠিকাদার মিজানুর রহমান খানের কাছ থেকে ভবনটি মাসে ৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছি। দেড় লাখ টাকা অগ্রীমও দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার মিজানুর রহমানকে। মিজানুর রহমান নিশ্চয়তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসনকে তিনি ম্যানেজ করে দিবেন। এখন ওই ভবনটিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।

 

নাম গোপন রেখে ইটালী শহীদের এক সহচর বলেন- আমরা অফিসটি ভাড়া নেইনি। অফিসটি ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছে তাই শহীদ ভাই ৩ লাখ টাকায় কিনে রেখেছে।

 

তবে ভাড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ঠিকাদার মিজানুর রহমান করে বলেন, ‘জেলা পরিষদ সদস্য শহিদুল ইসলাম শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০-২৫ দিন আগে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা আমার কাছে এসে ভবনটিতে দলীয় কার্যালয় করার কথা বলেন। তাদের অনুরোধে ভবনটি ভেঙে না ফেলে ব্যবহার করতে দিয়েছি।’

 

নিয়মানুযায়ী জমির প্রকৃত মালিক ভূমি অফিসকে কেন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে মিজান বলেন, ‘জমি-ভবন সবইতো সেখানে রয়ে গেছে। আমি কিছু নিয়ে যাইনি।যাদের জমি তারা চাইলে যে কোনো সময় ভেঙে দিতে পারেন।’

 

বরিশাল জেলা পরিষদ সদস্য শহীদুল ইসলাম ওরফে ইটালী শহীদ এ প্রসঙ্গে জানান, ঠিকাদার মিজান তাঁর বন্ধু হওয়ায় ভবনটি চেয়ে নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিস করেছেন। ইউনিয়নে দীর্ঘবছর যাবত দলীয় অফিস নেই। তাই ভূমি অফিসের জমিতে করা ওই ভবনটিতে তারা দলীয় কার্যালয় করেছেন। সরকারি খাস জমিতে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে শহীদ বলেন, ‘ভূমি অফিসের যেদিন প্রয়োজন হবে সেদিন ভেঙে দিলেই আমরা অন্যত্র চলে যাবো।’

 

চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা দিপক চ্যটার্জী জানান, তালতলী বাজারে গণপূর্তের ৮ একর জমি ছিল। সবজমি দখলমুক্ত করে ১ নম্বর খাসখতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ওইজমি এখন ভূমি অফিসের মালিকানাধীন। মডেল মসজিদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ একর জমি। নির্মাণ চলাকালে ঠিকাদার মিজানুর রহমান তার কার্যালয় স্থাপনের জন্য তাদের জমিতে আধাপাকা ভবন করেছিলেন। নিয়মানুযায়ী মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষে ঠিকাদার কার্যালয় ভবন ভেঙে দখলমুক্ত করবেন। অথবা ভবনের চাবি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হস্তান্তর করবেন। কিন্ত ঠিকাদার মিজান এখন পর্যন্ত সে কাজটি করেননি। সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পেয়েছি ভবনটির মধ্যে চেয়ার টেবিল রয়েছে। একই সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ছবি সাটানো। শুনেছি মিজান আধাপাকা ওই ভবনটি চারবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। তার ঠিকানা না জানায় তাকে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ করছেন না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা আইননানুগ ব্যবস্থা নিবেন।’

 

বরিশাল সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল মতিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণের সময় অফিস করার নামে ভূমি অফিসের জমিতে একটি টিনশেড ভবন করেছিলেন ঠিকাদার। যেহেতু মডেল মসজিদের কাজ শেষ তাই আমরা ঠিকাদারকে বলেছি টিনসেড ভবনটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি সরিয়ে না নিলে আমরা টিনশেড ওই ভবনটি উচ্ছেদ করে দেব।’

আরও খবর

Sponsered content