প্রতিনিধি ২ অক্টোবর ২০২৪ , ৭:৪১:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাময়িকভাবে চাকুরী হারানো প্রনব বেপারী তান্ডব চালাচ্ছে বরিশাল শিক্ষক সমিতিতে। নিজেকে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সভাপতি দাবী করে গত ৫ আগস্ট দখলে নেয় বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতির ভবন। এ নিয়ে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের হস্তক্ষেপে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি ভবন দখলমুক্ত হয়। শিক্ষক সমিতি কামরুজ্জামান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার শফিউল আযম গত দুবছর পূর্বে চাকুরী হতে অবসরে যায়। সিনিয়র এক বিএনপি নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে দখলদারিত্বে নামে এ দুই শিক্ষক ও তাদের আত্মীয়রা। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থলোপাট, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষার্থী নির্যাতন সহ নানা অপকর্মে তার পদত্যাগ’র দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মুখে তাকে সাময়িকভাবে চাকুরী হতে অব্যহতি প্রদান করা হয়।
প্রনব কুমার বেপারী বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল এন্ড কলেজে কর্মরত ছিলেন। প্রনব কুমার বেপারি ২০০৫ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক থাকলেও তিনি নিজেকে ‘অধ্যক্ষ’ বলে পরিচয় দিতেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজের অধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল প্রায় দুই যুগ।
এমনকি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেতো না। প্রনব কুমার তার আপন ভাগনী জামাই জীবন কৃষ্ণ বেপারী ও মৃদুল কান্তি বিশ্বাস (সুমন) এর কাছ থেকে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রায় ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক জীবন কৃষ্ণ বেপারী টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকার পরিমান কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমি কত দিয়েছি, কি দিয়েছি সেটা তো আমি আর প্রনব স্যার জানি।
সূত্র মতে, ল্যাব সহকারীর অঞ্জন বিশ্বাসের নিয়োগের জন্য নেয়া হয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা নেয়া হয়েছে। প্রনব কুমার এর আমলে ২০০৫ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি নিয়োগে মোটা অংকের ‘ঘুষ’ বাণিজ্য হয়েছে বলে
একাধিক সূত্র জানিয়েছে। শুধু চাকুরীতে নয়! প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে প্রনব কুমারের বিরুদ্ধে। যে সকল শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন তাদের নানা অজুহাতে বরখাস্ত বা বহিরাগতদের দিয়ে নির্যাতন চালাতেন, মারধর করাতেন। এ নিয়ে প্রনব কুমারের বিরুদ্ধে কয়েক বার আন্দোলন হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা হানিফ তালুকদার বলেন, ২০১৬ সালে পরীক্ষার ফি না দিতে পাড়ায় এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয় প্রনব কুমার। অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
মাধবপাশা চন্দ্রদীপ হাই স্কুল এন্ড কলেজে এর ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি, বাবুগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে প্রনবের বিরুদ্ধে কয়েক বার শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। পরে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বুঝিয়ে ক্লাসে পাঠানো হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পলায়নের পরে ঐদিনই প্রনব ও শফিউল আযমের নেতৃত্বে কৌশলে বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ি রোডস্থ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় ভবনটি দখলে নেয় তাদের অনুসারীরা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখার নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভবনটি দখলমুক্ত হয়।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক অফিসটির জমি ক্রয় করা হয় ১৯৯০ সনে। পরবর্তীতে ঐ জমিতে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুজ্জামান। ২০০৩ সালে তিনি পদ হারালে নিজ নামে একটি শিক্ষক সমিতি গঠন করে ঐ ভবনটি দখলে নেয়।
পরে ২০১২ সনে সংখ্যাগরিষ্ট শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে ভবনটি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বরিশাল আঞ্চলিক শাখা পরিচালনা করে আসছে।