বরিশাল অফিস ॥ বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। “সরকারি” হওয়ার দুই বছরেরও বেশী সময় পার হয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে সরকারি কোন ছোয়া নেই। নামে সরকারি হলেও সম্পূর্ন এবং শতভাগ বেসরকারি রুপে সরকারি তকমা নিয়ে চলছে এই বিদ্যাপিঠটি। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে শিক্ষার্থীদের বেতন না দেবার নিয়ম থাকলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত শিক্ষার্থীদের উচ্চ হারে দিতে হচ্ছে বেতন ও ভাতা। মিলছে না সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মত আনুসঙ্গিক অন্যসব সুযোগ সুবিধা। এ ফলে সার্বিক বিচার ও মূল্যায়নে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি মনযোগ হ্রাস পাচ্ছে তেমনি অভিভাবকদের মধ্যেই তৈরী হচ্ছে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ। তথ্য মতে, ২০০৭ সালে সুবিশাল ভবন ও সুসজ্জিত ক্যাম্পাস নিয়ে তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্তে নগরীতে যাত্রা শুরু করে মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। ওই সময়ে বরিশালে মানসম্মত স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে তেমন কোন মান সম্মত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এবং নগরীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তুমুল চাপ তৈরী হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে বেছে নেন। তুলনামূলক ভাল ভাবেই চলছিলো প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম। ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বের বর্তমান সরকার বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজকে সরকারি ঘোষনা করে। নাম বদলে হয়ে যায় বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ। সরকারি ঘোষনার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রায় শ’ খানেক শিক্ষক কর্মচারী, আড়াই হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে স্বাভাবিক ভাবেই আশার সঞ্চার হয়েছিলো সরকারি নামটি ঘিরে। কিন্তু বাস্তবে তা বিন্দু মাত্র পূরন হয়নি। ঘোষনার ২ বছরেরও অধিক সময় পার হলেও সরকারি নামটি ছাড়া কিছুই পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। এখনো শিক্ষার্থীদের মাসিক ৫৫০ টাকা হারে বেতন, প্রতিবছরের শুরুতে প্রদান করতে হচ্ছে সেশন ফি সহ উচ্চ হারে ভর্তি ফি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত এই অর্থই প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র উপার্জন বা আয়ের উৎস। এই অর্থ দিয়েই শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ প্রতিষ্ঠানটির সকল ব্যয়ভার বহন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মেজর সাদিকুর রহমান ঢাকায় অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে অফিসের হিসাব শাখার কর্মচারী আমির হোসেন বলেন, সরকারি ঘোষনার পর সরকারি খাত থেকে এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও বরাদ্ধ দেয়া হয়নি। সরকারি সুযোগ সুবিধা তো পরের কথা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্য অর্থ দিয়েই প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিককসহ আমাদের বেতন প্রদান করা হয়। এছাড়াও প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল ও ২৫ হাজার টাকা সফটওয়্যার বিল প্রদান করতে হয় এই টাকা দিয়ে। তিনি বলেন আমরা প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করছি। কিন্তু ফাইল চলাচলে গতি আসে না। তবে আশার কথা হচ্ছে বর্তমানে ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আশ করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইতিবাচক ফলাফল আসবে। আর ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতই কার্যক্রম পরিচালণা করা সম্ভব হবে। এদিকে এ বিষয়ে আলাপ কালে কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সরকারি লেবাসের কোন মানেই হয় না। এখনো প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থীদের ৭ হাজার ৫০ টাকা এবং পুরাতন শিক্ষার্থীদের ৬ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে ভর্তিতে দিতে হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে নানা খাতের খরচ। সরকারি সুযোগ সুবিধা না পাওয়া জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।