প্রতিনিধি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২:০৪:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া ও উচ্চতর তদবিরে
তালাশ প্রতিবেদক ॥ প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়া ও উচ্চতর তদবিরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রকাশ্যে নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী। গ্রেফতারি পরোয়ানার দীর্ঘ ৮ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই আসামীরা রয়েছে বহাল তবিয়াতে। আর এমন চলমান ধরাছোঁয়ার খেলায় আসামী আটকে দায়িত্ব পালনের গড়িমসিতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে থানা পুলিশ। তথ্যবহুল সংবাদ অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, বিগত প্রায় ১০-১১ বছর পূর্বে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২৪ নং ওয়ার্ড পূর্ব রূপাতলী জহির মৃধা ওয়াক্ফ এস্টেট সুষ্টভাবে পরিচালনার করার জন্য যৌথভাবে আলমগীর হোসেন (সেলিম মৃধা) কে ১নং ও আব্দুস সালাম মৃধাকে ২নং যুগ্ম মোতয়ালী হিসেবে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসক। নিয়োগের পর থেকেই এস্টেটের দলিলের শর্ত প্রতিপালনে গাফলতির বিস্তার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। যার পরিপেক্ষিতে ওয়াক্ফ এস্টেটের স্বত্বভোগী ওয়ারিশগণ নানা জটিলতার সম্মূখীন হয়েও তাদের দারস্ত হলে কোন ভূমিকা না নিয়ে ওয়াক্ফ এস্টেটের বিধান অনুসরণে শরীর ছাড়া মনোভাবে রয়েছে এই মোতয়ালীদ্বয়। তথ্য সূত্রে আরোও জানা যায়, তাদের এমন গাফলতির কারনে ইতিমধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর ও ওয়াক্ফ এস্টেটের বার্ষিক চাঁদা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি খাতে পাওনা রয়েছে। এর ধারাবহিকতায় সরকারি দাবি আদায় আইনের ১৯১৩ এর ৪, ৫ ও ৬ ধারানুসারে সার্টিফিকেট এর অনুকূলে আংশিক কিছু জমির দেনাদার হিসেবে জহির মৃধা ওয়াক্ফ এস্টেটের মৃত কাঞ্চন আলী মৃধা ছেলে ১নং যুগ্ম মোতয়ালী আলমগীর হোসেন (সেলিম মৃধা) এবং মৃত ফজলে আলী মৃধার ছেলে ২নং যুগ্ম মোতয়ালী আব্দুস সালাম মৃধার বিরুদ্ধে ২৯ ধারা মতে গত ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল একটি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়।
যার সার্টিফিকেট মোকাদ্দমা নং ৯৩/২০১৫-২০১৬। মামলার পূর্ববর্তী সময়ে দেনার টাকা পরিশোধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্টিফিকেট অফিসার বরিশাল সদর থেকে তাদের কে একাধিকবার নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু মোতয়ালীদ্বয় সেই নোটিশের কোন তোয়াক্কা না করায় ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারী উঃভূঃঅঃ/বরিঃ/সদর/২০/৫৩ নং স্মারকে তাদের বিরুদ্ধে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সার্টিফিকেট অফিসার বরিশাল সদর মোঃ মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেই গ্রেফতারী পরোয়ানায় বরিশাল কোতায়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কে আসামীদ্বয় গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার আদেশ প্রদান করা হয়। এদিকে রাজকীয় প্রাপ্য টাকা অনাদায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনে চলে যায় আসামী সেলিম মৃধা ও সালাম মৃধা। এদিকে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আসামী আটকে থানা থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে এক আতাত মিশনে নামে তারা। কিন্তু বরিশাল স্থানীয় গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদের শিরোনাম হলে প্রথম পর্যায়ে থানা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএসআই রিয়াজ ১নং আসামী সেলিম মৃধা কে নগরীর রূপাতলী সাগরদী এলাকায় থেকে আটক করলেও কিছু নামমাত্র পাওনা পরিশোধ করে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে পার পেয়ে যায় তিনি। এরপর থেকেই নানান নাটকীয়তায় ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে চলে যায় তারা। পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য তদবিরের চোর-পুলিশ খেলায় থানা পুলিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিলে প্রকাশ্যে নগর দাপিয়ে চলতে থাকে তারা।
দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক পর্যায়ে বরিশাল কোতায়ালী মডেল থানার এএসআই সিদ্দিক বরিশাল সহকারি কমিশনার (ভূমি) আদালত থেকে উপজেলা ভূমি অফিস, বরিশাল সদর এর সার্টিফিকেট সহকারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন এর কাছ থেকে হাতে হাতে পুনরায় আসামীদ্বয়কে আটকের মর্মে গ্রেফতারী পরোয়ানা গ্রহণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে নতুন নীল নকশা তৈরির মিশনে নামে সেলিম-সালাম। এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো রাজকীয় পাওনা অনাদায়ে আসামীদ্বয় আটকে ব্যর্থতা আসে এসএসআই সিদ্দিকের ঝুলিতেও। অবশ্য এ বিষয়ে এসএসআই সিদ্দিক হাস্যরস ভাষ্যে বলেন, “করোনা তো ভাই, একটু ঘুরুক-ফিরুক। আটক করে কি করবো বলেন। উপর থেকেই বলা আছে এই সময়ে আটক অভিযান একটু কম করতে”। এদিকে আসামী আটকের ব্যর্থতার কারন জানতে ও সংবাদ অনুসন্ধানে নামে দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার অনুসন্ধান মাধ্যম। গ্রেফতারী পরোয়ানা ও মামলার বর্তমান অবস্থান জানতে অনুসন্ধান মাধ্যম উপস্থিত হন বরিশাল সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে। এসময় তথ্য অনুসন্ধানে উপজেলা ভূমি অফিস, বরিশাল সদর এর সার্টিফিকেট সহকারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন দৈনিক আজকের তালাশ কে জানান আসামীদ্বয়ের মধ্যে ১নং যুগ্ম মোতয়ালী আলমগীর হোসেন সেলিম মৃধা হাইকোর্ট পিটিশন করে ২০২০ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৬ মাসের জন্য তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আদেশ স্থগিত করেন। যার হাইকোর্ট পিটিশন নং-১৩৫৮৬/১৯।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে আরোও জানা যায়, পিটিশনের নির্ধারিত তারিখ অতিবাহিত হলেও পরবর্তী কোন সু-নির্দিষ্ট আইনী বিধিমালায় রাজকীয় পাওনা টাকা পরিশোধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সেলিম মৃধা। অপরদিকে বরিশালের বেশ কিছু স্থানীয় গণমাধ্যমে আসামী আটক না হওয়ায় পূনরায় সংবাদ প্রকাশ হলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোতয়ালী থানা পুলিশের একজন চৌকস অফিসার মামলার ২নং আসামী আব্দুস সালাম মৃধা এলাকায় উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেবারও পালিয়ে যায় সালাম মৃধা। বর্তমানে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদেশ বহাল থাকার পরেও সেলিম-সালাম নগরীর বিভিন্ন স্পটসহ নিজ এলাকায় বহাল তবিয়াতে রয়েছে বলে নিশ্চিত করছে একটি বিশ্বস্ত সূত্র। এদিকে জহির মৃধার ওয়াক্ফ এস্টেটের বাকি ভূমির উন্নয়ন কর বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে বলে সংবাদ অনুসন্ধানে জানা যায়।
যার পরিপেক্ষিতে এস্টেট নিলামের আশংকা করছে এস্টেটের স্বত্বভোগী ওয়ারিশগণ। (পাঠক জহির মৃধা ওয়াক্ফ এস্টেটের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীদের তথ্য নিয়ে কাজ করছে দৈনিক আজকের তালাশ পত্রিকার অনুসন্ধান মাধ্যম। ধারাবাহিক এই প্রতিবেদনের সবটুকু সংবাদ জানতে পরবর্তী পর্বের জন্য নিয়মিত চোখ রাখুন পত্রিকার পাতায়)।