প্রতিনিধি ২৭ অক্টোবর ২০২০ , ৫:১৯:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
কাজী বাবুল ॥ এক সময়ের অবহেলিত বরিশাল নগরীর বিসিক শিল্প নগরী। যেখানে বর্তমান সরকারের সু-দৃষ্টির কারণে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আর তাই গত কয়েক বছরেই পাল্টে গেছে বিসিক শিল্প নগরী। বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে বড় বড় এক্সপোর্ট অরিয়েন্টেড শিল্প কারখানা। এমনকি চলমান উন্নয়নের ধারায় আগামী কয়েক বছরে গোটা বিসিক শিল্প নগরী একেবারেই পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু অপার সম্ভাবনায় বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীতে সরকারের চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে স্থানীয় একটি মহল। যারা অবৈধভাবে ফায়দা হাসিলের জন্য এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছে। এমনকি উন্নয়ন কাজের সাথে জড়িত একটি স্বনামধন্য অনলাইন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং শিল্প মালিকের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটিয়েছে।
যা নিয়ে ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানায় পৃথক দুুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় সরকারের উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টিকারী কথিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের আসামি করা হয়েছে। এ কারণে চাঁদাবাজ বাহিনী এবার পাল্টা ছক তৈরি করেছে বলে অভিযোগ বিসিক শিল্প মালিকদের।
তারা বলছেন, ‘শিল্প মালিকদের ওপর হামলা’র ঘটনা আড়াল করতে চাঁদাবাজরা বুধবার সকালে বিসিক এলাকায় মানববন্ধন করেছে। ওই মানববন্ধনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধন থেকে সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে বিসিক শিল্প নগরী অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন আয়োজকরা।
এদিকে শুধু তাই নয়, গতকাল মঙ্গলবার মামলার সাক্ষীদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে সাদা কাগজে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী পক্ষ। তবে এ অভিযোগের সত্যতা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আর এসব বিষয় নিয়ে বিসিক শিল্প নগরী আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে শিল্প মালিক সমিতি। তবে পরিস্থিতি শান্ত এবং কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিসিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিসিক কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
তবে বিসিক শিল্প নগরীর উন্নয়ন এবং মালিকদের নিয়ে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সেখানকার অন্যান্য শিল্প মালিকরা। তাদের মতে বিসিক নিয়ে ষড়যন্ত্র চলতে থাকলে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বিসিক। উন্নয়ন থেমে গেলে আবারও সেই পুরানো বন্দুকযুদ্ধের ক্ষেত্রস্থলে পরিণত হবে শিল্প নগরী। ফলে এমন পরিস্থিতির উন্নয়নে নগর পিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
জানাগেছে, ‘১৯৬১ সালে ১৩১ দশমিক ৬১ একর জমি নিয়ে নগরীর কাউনিয়া এলাকায় শুরু হয় বরিশাল বিসিক এর কার্যক্রম। তবে এটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অবহেলিত এবং অনুন্নত অবস্থায় পড়েছিলো। রাত হলেই অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হতো বিসিক। মাদক ব্যবসা, জুয়া, ছিনতাইসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা সংঘটিত হয়নি বিসিক এলাকায়। শুধু তাই নয়, সন্ত্রাসী এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাও ঘটেছে এক সময়ের নির্জন বিসিকে।
এসব কারণে বরিশাল শিল্প নগরীতে প্লট তৈরি থাকলেও ব্যবসার পরিবেশ হারিয়ে যায়। ফলে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন শিল্প মালিকরা। যারা ছিলেন তারাও মুখ ফিরিয়ে নেন বিসিক থেকে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরে পাল্টে যায় বিসিক শিল্প এলাকা। জরাজীর্ণ এই বিসিক শিল্পায়নের উপযোগী করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বিসিক শিল্প এলাকায় সড়ক, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং লো-ল্যান্ড উন্নয়নে অর্ধশত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে ঠিকাদার নিযুক্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু উন্নয়ন কাজের শুরুতেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্থানীয় চিহ্নিত চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসী বাহিনী। যারা সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
এদিকে বরিশাল বিসিক শিল্প নগর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘সরকারের নানামুখী উন্নয়নের কারণে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীর প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। এখানে ফরচুন সুজ, প্রিমিয়ার সুজ, বেঙ্গল বিস্কুট, এমইপি, কেমিস্ট, জেএস মিনারেল ওয়াটার, সিটিজেন ম্যানুফ্যাক্সার, ইত্যাদি ফুড এবং সাহাবুদ্দিন বেকারির মতো অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের ১৭৩টি প্লট রয়েছে। যার মধ্যে শিল্প কারখানা রয়েছে ১৭৩টি। এর মধ্যে ১১৪টি অনুন্নত, যেটাকে লো-ল্যান্ড বলা হয়। বর্তমানে বিসিকে যত প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার বেশিরভাগই বর্তমান সরকারের আমলে হয়েছে। এখনো বরিশাল বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ঢাকা, খুলনা এবং চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উদ্যোক্তারা আসছেন। কিন্তু তাদের আমরা জায়গা দিতে পারছি না। তবে লো-ল্যান্ড ভরাট কাজ শেষ হলে সেখানে বড় বড় কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি চলমান থাকলে রহস্যজনক কারণে তা বাস্তবায়নে বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বিসিক শিল্প সমিতির কয়েকজন মালিক সন্ত্রাসীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিসিক শিল্প নগরীর টেন্ডার হলেও ঠিকাদাররা ভয়ে উন্নয়ন কাজ করতে আসেননি। এর কারণে দরপত্রের কার্যাদেশ দেয়ার এক বছর পর্যন্ত উন্নয়ন কাজ বন্ধ ছিলো। পরে শিল্প মালিকদের স্বার্থে বিসিক শিল্প মালিক সমিতি’র প্রচেষ্টায় উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়।
এমনকি এ সমিতির কারণেই সরকারের উন্নয়নে কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। যেটা সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের সহ্য হয়নি। তাই সরকারের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক চাকা সচল করার জন্য হলেও বিসিক নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধে জনপ্রিয় নগর পিতা ও উন্নয়নের কা-ারি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন শিল্প মালিক এবং উদ্যোক্তারা।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী বিসিক শিল্প নগরীর একজন উদ্যোক্তা এবং একটি স্বনামধন্য অনলাইন নিউজ পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক শফিকুল আজম শফিক বলেন, ‘সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করায় তাদের অপকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের যে পরিকল্পনা ছিলো তা ভ-ুল হতে বসেছে। একারণেই সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজরা মানববন্ধনের আয়োজন করে।
এদিকে বিসিক শিল্প এলাকায় দিনভর অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগরীর কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আজিমুল করিম বলেন, ‘সকালে বিসিক এলাকায় একটি মানববন্ধন হয়েছে। তাছাড়া বিকালে স্থানীয় মুসল্লিরা বিক্ষোভ করেছেন। এ নিয়ে যাতে কোন প্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে কারণেই মূলত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে মামলা করা নিয়ে শিল্প মালিক বা বহিরাগতদের মধ্যে কোন বিরোধ বা উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার কোন খবর নেই বলে জানান তিনি।