দেশজুড়ে

আগৈলঝাড়ায় অস্তিত্বহীন কবর বাঁধাই নিয়ে বিপাকে উপজেলা প্রশাসন

  প্রতিনিধি ১৮ জুন ২০২১ , ১২:১৩:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় অস্তিত্বহীন চার শহীদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধার কবর বাধাঁইয়ের তালিকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে যুদ্ধকালীন সময় থেকে তিন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নিখোঁজ থাকায় তাদের কবর বাধাঁইয়ের কোন প্রশ্নই আসে না।

অপরজনের যুদ্ধাকালীন সময় তার ভূমিকা রহস্যজনক হওয়ায় তাকে নিয়ে বিতর্কিত থাকায় কোনভাবেই তার কবরস্থান বাঁধাই করতে দেবে না স্থানীয় প্রকৃত বীরমুক্তিযোদ্ধারা। আর এ অস্তিত্বহীন তিনজন এবং বিতর্কিত এক মুক্তিযোদ্ধার কবর বাধাঁইয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ টাকা করে ৮ লাখ টাকা।

কবর বাধাঁইয়ের তালিকায় থাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন (যাদের মরদেহ খুজে পাওয়া যায়নি): আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের মধ্যশিহিপাশা গ্রামের মৃত মুন্সি রওশন আলী মোল্লার ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মোল্লা, বাকাল ইউনিয়নের পয়সারহাট গ্রামের মৃত খাদেম আলী মোল্লার ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক মোল্লা, একই গ্রামের মৃত ইউসুফ আলী বখতিয়ারের ছেলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তৈয়ব আলী বখতিয়ার।

এছাড়া বিতর্কিতের তালিকা রয়েছে রত্নপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুর রহমান শিকদারের ছেলে আবদুল গফুর। সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটভূক্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গফুরের নাম থাকলেও উপজেলার তালিকায় কোথাও নাম নেই আবদুল গফুরের। স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যুদ্ধের পূর্বে তিনি কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলা ও আগৈলঝাড়া উপজেলাসহ ১০টি উপজেলায় সরকারি গেজেট অনুযায়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রতি কবরস্থানের জন্য ২ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল নির্মানে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে দরপত্র সম্পন্ন করা হয়। এক পত্রের আলোকে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসককে অবহিত করে জেলার ১০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সনাক্ত করে বুঝিয়ে দিয়ে ইউএনওদের মাধ্যমে সঠিকভাবে কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে তালিকা প্রেরণ করেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাশেম তালিকা পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুশান্ত বালাকে গত ৯মে যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। সুশান্ত বালা জানান, পরিদর্শনকালে তালিকাভূক্ত শহীদ আব্দুল মান্নান মোল্লা, শহীদ শামসুল হক মোল্লা, শহীদ তৈয়ব আলী বখতিয়ারের কবরস্থান তাদের বাড়িতে দেখতে পাননি। উপজেলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তাদর নাম থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বা তার পরে তাদের মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।

বিপত্তি ঘটে যখন আবদুল গফুরের কবরের অনুসন্ধানে তার নিজ বাড়ি বারপাইকা যান। যাওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে জরো হয়ে গফুর মুক্তিযোদ্ধা নন দাবি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সহকারী কমান্ডার ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রতনপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী হাওলাদার জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১৬ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। যাদের প্রতি বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা প্রশাসন হতে সম্মাননা দেয়া হয় এর বাইরে কোন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আমাদের উপজেলায় নেই। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক সরদার জানান, আবদুল গফুর নামে কোন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আমাদের উপজেলায় আছে বলে আমার জানা নেই।

উপজেলা চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির প্রথম সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী মুক্তিযোদ্ধা রত্নপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামে। ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীন ব্যক্তিসহ অন্তত দু’শো মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন গফুর নামে কোন মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নেই। গফুর নামে এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের আগেই কলেরায় মারা গেছেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেড়াল্ড অলিভার গুডা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয় থেকে দেয়া তালিকার ভিত্তিতে গনপূর্ত বিভাগ ২ লাখ টাকা করে একেকটি কবরস্থান বা শ্মশান বাধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে। জেলার অধিকাংশ জায়গায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরস্থান নিয়ে ঝামেলা ও বিতর্ক থাকায় সঠিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান সনাক্ত করার জন্যই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি)।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ের তালিকানুযায়ি তারা শহীদ বা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই বাস্তবায়ন করছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান নিয়ে কোথাও কোন বিতর্ক দেখা দিলে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো না। আগৈলঝাড়ার বিষয়টি নিয়ে তিনি বরিশাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান। পর্যায়ক্রমে সকল মুক্তিযোদ্ধার কবরই বাাঁধাইয়ের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content