অপরাধ

প্রশাসন নয়- এবার রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে বরিশালে চলছে জুয়ার আসর!

  প্রতিনিধি ১ আগস্ট ২০২৩ , ৪:০৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

  • তালাশ প্রতিবেদক ॥  বরিশাল নগরীর বিভিন্ন স্পটে প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে প্রতিনিয়তই চলছে রমরমা জুয়ার আসর। জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক সমস্যা বাড়ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাত হলেই বসছে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলার আসর। ওয়ান-টেন, তিন তাস, কাটা-কাটিসহ নানা নামে চলছে জুয়া। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অফিস, বাসা-বাড়িতে চলছে এসব জুয়ার আসর। এতে ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হলেও জুয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র।

 

আজকের তালাশ পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়- নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে জুয়ার আসর বসাচ্ছে প্রবাবশালী একটি রাজনৈতিক মহল। সেখানে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলার আসর বসে। অন্যদিকে নগরীর সিএন্ডবি রোড সংলগ্ন ইছাকাঠি সড়কের মিন্টুর বাসায় রাতভর চলে রমরমা জুয়ার আসর। পাশাপাশি সেখানে বসে মাদকের হাট। অপরদিকে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার কাজিপাড়া সড়কে এক প্রবাসীর বাসায় বসে জুয়ার আসর। এছাড়াও নগরীর সদর রোডের হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল ও আগড়পুর রোডের হোটেল মেলোডির কক্ষেও বসে এই জুয়ার আসর। সেখানে শেষ রাত পর্যন্ত চলে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলা। এসকল জুয়ার আসরে অবাধে চলে মাদক সরবরাহ। এমনকি বড় বড় জুয়ারিদের মনরঞ্জনে দেয়া হও নারীও।

 

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- কামরুল ও ফোরকান নামের দুই জুয়ারি রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতক্ষ্য মদদে বসান এসব জুয়ার আসর। শহিদ ও যাত্রা কালাম নামের দুই ব্যক্তির সহযোগীতায় বরিশালের প্রায় সকল জুয়ার স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন এই কামরুল ও ফোরকান। কামরুল, ফোরকানের নেতৃত্বে জুয়ার আসর গুলোতে মূলত ওয়ান-টেন খেলাটাই বেশি জনপ্রিয় বলে জানা যায়। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মদদে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে জুয়াড়িদের কাছ থেকে আয়োজকরা টাকা আদায় করে। আর এর বিনিময়ে জুয়া খেলার জন্য বিকাশ, নগদ টাকা ধার, বন্ধক, মোবাইল, ঘড়ি, স্বর্ণ, মাদকসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে আয়োজকরা। এতে করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে আসক্তরা আর লাভবান হচ্ছে আয়োজকরা।

সূত্র জানায়- বরিশালের শীর্ষ স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ম্যানেজ করে এসব জুয়ার আসর চালাচ্ছে জুয়ারিরা। রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের বিষয়ে জানতে চাইলে সূত্র জানায়- পদ-পদবি না থাকলেও রাজনৈতিক নেতারা যাদের ব্যবহার করে নগরীর সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রন করে থাকেন তারাই ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাসী’ বলে রচিত। এরা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নগরীর সকল অপকর্মের শেল্টারদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।

 

জানা যায়, জুয়ার বোর্ডে ২০ হাজার টাকার পণ্য ২ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। আয়োজকরা ম্যানেজ পন্থা অবলম্বন করে দিনের পর দিন চালাচ্ছে এসব অপকর্ম। আয়োজকদের নির্ধারিত মাইক্রোবাসে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে জুয়ারিদের এসব স্পটে আনা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানা যায়।

 

এ বিষয়ে কামরুলের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন- বরিশালে অবাধে জুয়া চলে বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু আমি জুয়ার সাথে জড়িত নই, তবুও দোষ আমার মাথায় ওঠে।

 

এ বিষয়ে ফোরকানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- রাজনৈতিক কিছু ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করেই আমি জুয়ার আসর চালাই। আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। শহীদ এবং কালামের দাবী তারা জুয়ার সাথে জড়িত নয়।

 

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এসব জুয়ারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে দাবী শীর্ষ কর্মকর্তাদের। যার ফলস্রুতিতে বেশ কয়েকবার থানা ও ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় অর্ধশতাধিক জুয়ারিকে আটক করে মামলা দিলেও এরা মুক্তি পেয়ে ফের জুয়ার আসর বসান।

 

সম্প্রতি মিন্টুর বাসা থেকে ১০ জুয়ারিকে আটক করে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠায় ডিবি পুলিশ। এরপর তারা ছাড়া পেয়ে ফের মিন্টুর বাসায় কৌশল পাল্টে নারীদের পাহাড়ায় বসিয়ে চালায় জুয়ার আসর।

আরও খবর

Sponsered content