টিম নিউজ

বরিশালের লাহারহাটে তরমুজের পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি!

  প্রতিনিধি ৬ এপ্রিল ২০২৪ , ১০:৪১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে চলতি বছর ৯৯৫ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। এর বেশির ভাগই যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু জেলা থেকে পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীরা পদে পদে চাঁদাবাজির সম্মুখীন হচ্ছেন।

 

চাষি ও ব্যাপারীরা বলছেন, বরিশাল থেকে সাধারণত দুভাবে তরমুজ পরিবহন করতে হয়। প্রথমত, ট্রলারে তরমুজ নিয়ে বরিশালে নিয়ে ট্রাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এছাড়া সরাসরি ট্রাকে তরমুজ তুলে নৌযানে পারাপার করা। কিন্তু পরিবহন করতে গিয়ে নৌপথের বিভিন্ন ঘাটে নির্দিষ্ট হারে তাঁদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। অন্যথায় নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল পার করা যায় না। কাঁচামাল হওয়ায় তাঁরা চাঁদা দিতে বাধ্য হন।

 

ট্রাকচালক কাশেম বলেন- বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট ও সরদার বাড়ি ঘাটে এলেই কাঁচামালের গাড়ি থেকে ইজারাদারের লোকজন ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা চাঁদা নেন। অথচ ঘাটের ইজারা ৬০-৭০ টাকা। এ নিয়ে প্রতিদিন ট্রাকচালকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে সংঘবদ্ধ হয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালে এবার প্রায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়। এসব খেতে প্রায় ৮ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। এসব তরমুজ ট্রলারে অন্য জেলায় যায়। ট্রলার ছাড়া খেত থেকে সরাসরি ট্রাকে তরমুজ তুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাটে মনির মোল্লা ও ফরিদ মৃধা অস্থায়ী ঘাট বসিয়ে গাড়ি প্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন। অন্যদিকে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের সরদার বাড়ি এলাকায় যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান ঘাট বসিয়ে গাড়ি প্রতি ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পরিবহন থামিয়ে চাঁদা নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

মনির মোল্লা বলেন- গত বছরের তুলনায় এ বছর কম টাকা নেয়া হচ্ছে। এরআগে ঘাটের ইজারাদাররা আরও বেশি টাকা নিতেন। আপনি (প্রতিবেদক) ঘাটে আইসেন।

 

ফরিদ মৃধা বলেন- আমরা ঘাটের টাকা উঠাই। এ নিয়ে আপনাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন?

 

যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান বলেন- আপনারা ভাই ব্রাদার। এ নিয়ে নিউজ করার কিছু নেই। এই জমি আমাদের তাই এখানে ঘাট বসিয়েছি। আপনার কাছে লোক চলে যাবে।

 

ট্রাকচালক ও ব্যাপারীদের অভিযোগ, ঘাটে সিরিয়াল দিয়ে তদবির না করলে ডাক আসে না। কেউ ঘাটে এসে ইজারাদারের লোকজনকে টাকা দিলে মুহূর্তেই পার হয়ে যেতে পারেন। ঘাটে ভাড়ার নির্দিষ্ট তালিকা না থাকায় তাঁরা কিছু বলতেও পারেন না।

 

ট্রাকচালক ও ব্যাপারীরা জানান, লাহারহাট ঘাটের ইজারাদার মনির মোল্লা ও ফরিদ মৃধা গাড়ি থেকে চাঁদা তোলেন। এ জন্য তাঁরা কোনো রসিদ দেন না। প্রতিবাদ করলে সিরিয়ালের ভয় দেখিয়ে ৬-৭ দিন পরে আসতে বলেন।

 

ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মোঃ সিহাব উদ্দিন বলেন, ঘাটে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তিনিও শুনেছেন। ইজারাদারকে নিয়ন্ত্রণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এ ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবে। তিনি বলেন, বর্তমানে পাঁচটি ফেরি চলছে। এখন তরমুজের গাড়ির ভিড় বেশি।

 

বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর মুকুল বলেন- বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ঘাটের নির্ধারিত ইজারা আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content