অপরাধ

ভয়ঙ্কর চক্রের নেতৃত্বে চরবাড়ীয়া থেকে পাচার হচ্ছে জাটকা!

  প্রতিনিধি ২২ মার্চ ২০২৩ , ৪:৫৪:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ জাটকা পাচার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একশ্রেণীর অসাধু মাছ ব্যবসায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে বরিশালের বিভিন্ন স্থান থেকে জাটকা সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী বজার এলাকা। কাউনিয়া ও এয়ারপোর্ট থানা পুলিষের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে জাটকা পাচার করা হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে পাচারকালে কিছু জাটকা জব্দ করলেও এগুলো শুধুই লোক দেখানো বলেও অভিযোগ রয়েছে।

 

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১ মার্চ থেকে ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত ২ মাস ৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ (জাটকা) শিকার, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদ-নদীতে নজরদারি করে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশ এবং র‌্যাব। তবে বিশাল জলসীমায় সরকারি এসব সংস্থার পক্ষে পুরো এলাকা নিখুঁতভাবে তদারকি করা সম্ভব হয় না। এ সুযোগে বরিশালের হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনা, সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, লাহারহাট-ভেদুরিয়া, কীর্তনখোলা, কালাবদর, ইলিশা, আড়িয়ালখাঁ, বাবুগঞ্জের সন্ধ্যা এবং সুগন্ধাসহ সব নদ-নদীতেই কমবেশি চলে জাটকা নিধন।

 

জেলেদের কাছ থেকে ওই জাটকা কিনে বরিশাল সদর উপজেলার তালতলি এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাকিন সিকদার, নঈম, মিরাজ, নিজাম, সেলিম, নাসির মোল্লা বিশেষ রুট ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন বলে বরিশালের ইলিশ মোকামে অভিযোগ রয়েছে। এসব জাটকা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বাগড়জা গ্রামের সাবেক মেম্বর দিলু, বর্তমান মেম্বর কবির বাগ নিজেদের তত্বাবধায়নে জেলেদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে উল্লেখিত ব্যবসায়ীদের কাছে ট্রলার যোগে তালতলি বাজারে পৌঁছে দেন।

 

জানা গেছে, সাবেক মেম্বার দিলু ও বর্তমান মেম্বার কবির বাগ ৫০ জনেরও বেশি জেলেকে দাদোন দিয়ে এসব জাটকা নিধন করান। স্থানীয় প্রভাব ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে খুব সহজেই জেলেদের শেল্টার দিয়ে প্রতিনিয়ত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মন জাটকা নিধন করায় বলে জানা গেছে। নিধনকৃত সেই জাটকাগুলোর পুরোটাই তালতলি বাজারে পৌঁছে দেয় তারা। প্রতিনিয়ত নৌ-পুলিশ ও নদীতে টহল পুলিশকে উৎকোচ দিয়ে হরহামেসাই পাচার করা হচ্ছে এসব জাটকা। অবৈধ জাটকাগুলো তালতলি বাজার ও বাজার সংলগ্ন ভূইয়া ভবনের সামনে দিয়ে গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ট্রাক ও ব্যাটারিচালিত অটো যোগে ঢাকা, উজিরপুর ও বরিশাল সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাচার করা হয়।

 

এ নিয়ে সরেজমিনে অসুসন্ধানে গিয়ে অনেক সংবাদকর্মী মাছ ব্যবসায়ী শাকিন সিকদার, নঈম, মিরাজ, নিজাম, সেলিম, নাসির মোল্লার রোষানলে পড়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এরা এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছেন যে তাদের ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ স্থানীয়রা। বরিশালের শীর্ষ স্থানীয় কয়েক জন নেতার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ শেল্টার ও প্রশাসন ম্যানেজ থাকার কারণে তাদের দাপট এখন আকাশচুম্বি। এ জন্যই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এই চক্র।

 

গত (১০ মার্চ) শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নৌ-পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ কয়েকটি টিম হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমে অভিযান পরিচালনা করলে নদীতে থাকা একটি জাল তুলতে গেলে আশপাশের কয়েকশ জেলে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের ওপর হামলা করে। এতে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ বিকাশ চন্দ্র দে সহ কয়েকজন আহত হয়েছিল। এ ঘটনায় ওই চক্রের অনুসারী সাবেক মেম্বার দিলু ও বর্তমান মেম্বার কবির বাগের মদদের গুঞ্জন রয়েছে।

 

পাচারকারী চক্রের মূলহোতা শাকিন সিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা তালতলি বাজারে মাছের আড়ৎ চালাই। আমরা জাটকা পাচারের সাথে সম্পৃক্ত নই।

 

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তালতলী বাজার এলাকায় কোস্টগার্ডের বিশেষ অভিযানে ৫৬০ কেজি জাটকা মাছসহ ২টি অটোরিকশা জব্দ ও চালকদের আটক করা হয়। এর দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই ১৮ মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি ২১ ড্রাম জাটকা উদ্ধার করে পুলিশ। আটক করা হয় ট্রাক ড্রাইভার সোহেল সরদার ও মিরাজের ভাইয়ের ছেলে আঃ রহমান ওরফে রিমনকে। আটকের পরে সাংবাদিকদের সামনে রিমন ওই চক্রের প্রায় সকল সদস্যের নাম প্রকাশ করেছিলেন। আটকের পরে বিমানবন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলালউদ্দিন বলেছিলেন বিপুল পরিমাণ জাটকা বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে এমন খবরে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। উল্লেখিত ঘটনায় প্রমাণ মেলে তালতলি বাজার থেকে প্রতিনিয়তই জাটকা পাচার হচ্ছে।

 

কোস্টগার্ড ও বিমানবন্দর থানা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমান জাটকা আটক হলেও সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

 

আরও খবর

Sponsered content