অপরাধ

বরিশাল নগরীর আল মাদানী সড়কে রাতের আঁধারে পুকুর ভরাট!

  প্রতিনিধি ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ , ১:০১:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীতে একে একে ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর। ভূমিদস্যুদের থাবায় অসংখ্য পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে নগরীর অসংখ্য পুকুরের নাম-নিশানা পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে-পুকুর এবং খালগুলোও ভরাটের ফলে পরিবেশ দুষণে মানব সভ্যতা বিরোধী প্রতিযোগিতা চলছে। ভরাট হওয়া পুকুর ও খালগুলোতে বহুতল ভবন এবং মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। আবার যেসব পুকুর রয়েছে সেসবও পর্যায়ক্রমে ভরাটের পাঁয়তারায় মগ্ন রয়েছেন পরিবেশ বিনষ্টকারী ভূমি খেকোরা। বিশেষ করে বরিশাল নগরীর বেলতলা বাজার সংলগ্ন আল মাদানী সড়ক এলাকায় রাতের আঁধারে পুকুর ভরাটের সকল আয়োজন প্রস্তুতি সম্পন্নের নীলনকশায় পথে রয়েছে। নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডের আল মাদানী সড়ক বেলতলা বাজার সংলগ্ন হলেও স্থানীয়দের কাছে টেক্সটাইল রোড নামে পরিচিত। গত কয়েকদিন গভীর রাত থেকে পুকুর ভরাটের জন্য ট্রাকে ট্রাকে বালু ফেলা হচ্ছে।

 

এদিকে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে হঠাৎ করে পুকুর ভরাটের এহেন দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী হতবাক হয়ে যান। নিরবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকার শান্তিপ্রিয় নারী-পুরুষ। এই পুকুরটি ভরাটের দৃশ্য কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ এই পুকুরে এলাকার পানি সমস্যা সমাধান করে আসছিল। তবুও এলাকার সাধারন জনগণ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। প্রতিবাদের ভাষা নেই তাদের।

 

প্রশ্ন হচ্ছে-পুকুরটি কে ভরাট করছে? এমন প্রশ্নে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে- স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল হক লিটন নামের এক ব্যক্তি পুকুরের মালিক। যেহেতু লিটন গং মালিক সেহেতু তারাই ভরাট করছেন।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন- পরিবেশ আইন অনুযায়ী জলাশয়,পুকুর ভরাট সম্পূর্নরুপে নিষিদ্ধ। সুতারং পুকুর ভরাটের সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকুক, তারা বেআইনীভাবে কাজ করছেন। এ বিষয়টির খবর পেয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরে অবহিত করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিক্নন বায়েন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

পরিবেশ অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে না। তবে কোনো দপ্তর যদি সরকারি কাজে নিজস্ব পুকুর ভরাট করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাটের একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই জমিটি বিগত দিনে পুকুর ছিল। আশেপাশের লোকজন নিত্যদিনের কাজে এই পুকুরের পানি ব্যবহার করত। জমি মালিক জিয়াউল হক লিটন এখন পুকুরটি ভরাট করছে।

 

জিয়াউল হক লিটনর বলেন- এই জায়গায় কোন পুকুর ছিল না, এটা নিচু জমি তার জন্য বালু দিয়ে ভরাট করছি।

 

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৪ নং ওয়ার্ডের রোড ইন্সপেক্টর মো: রেজাউল কবির বলেন- আল মাদানী সড়কের পুকুর ভরা হচ্ছে আমি জানতাম না। আমি অসুস্থ দুই দিনের ছুটিতে আছি। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখছি।

 

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কামাল মেহেদী জানান, পুকুর ভরাট কোনভাবেই করা যাবে না। এটা আইনগতভাবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিষয়টি আমার জানা ছিল না, এখন জানলাম। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content