প্রতিনিধি ১১ জুলাই ২০২০ , ৬:৫৯:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর রূপাতলী গ্যাষ্টারবাইন এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় মামলার আসামীদের গ্রেফতার করতে সফল অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাপিট এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৮)। গত ৯ জুলাই এ অভিযানে মামলার ৩ জন আসামীকে আটক করতে সক্ষম হন তারা। থানায় মামলা হওয়ার ৪৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা বহাল তবিয়র্তের এজাহারভূক্ত আসামীদের গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার সাধারণ জনগনের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য বরিশাল নগরীর রূপাতলী এলাকায় করোনা আক্রান্ত মহিলার মৃত্যুতে দাফন ও মাটি দেয়ায় অংশগ্রহণ না করার জেরে ৭ জনকে কুপিয়ে জখম করে স্থানীয় সুমন মুন্সী ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা। ঘটনাটি ঘটে গত ৬ জুলাই সোমবার বিকেল তিনটায় নগরীর ২৫ নং ওয়ার্ডের গ্যাষ্টারবাইন বাজার সংলগ্ন এলাকায়। আহতরা হলো ঐ এলাকার আমির আলী খানের ছেলে সুমন খান, রিজিয়া বেগম ও তাদের স্বজন দোলা বেগম, হাসি বেগম, রমজান, তামিম, কবির খান, রসূল আলী খান। এদের মধ্যে ধরালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হওয়া সুমন খান ও রিজিয়া বেগমকে সাথে সাথে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলাকাবাসীরা উদ্ধার করে ভর্তি করে। স্থানীয় প্রতক্ষ্যদর্শী, আহতের স্বজন ও তথ্য অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, গত ১০ দিন পূর্বে রূপাতলীর গ্যাষ্টারবাইন এলাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্তে ওই এলাকার ইউসুফ মুন্সী স্ত্রী ফরিদা বেগমের মৃত্যু হয় বলে ধারনা করেন এলাকাবাসী।
করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর এমন ধারানার বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই দাফন এবং মাটি দিতে যায়নি। দাফন এবং মাটি দিতে না যাওয়ায় প্রতিবেশী সুমন খানের সাথে করোনা আক্রান্ত মৃত ফরিদা বেগমের ছেলে সুমন মুন্সির বিরোধ হয়। এ সময় বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে মামলার এজাহারভূক্ত ১ম আসামী সুমন মুন্সী ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা সুমন খান ও তার পরিবারের স্বজনদের উপর পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায়। এসময় সুমন মুন্সি ও তার বাবা ইউসুফ মুন্সী, রাজ্জাক ও মামুন মুন্সি এবং তাদের সহযোগী রাকিব, হিরণ, রাশেদ, রেজবুল, কাদেরসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা হত্যার চেষ্টায় সুমন খান কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এক পর্যায়ে তাদের ডাক চিৎকারে চাচী রিজিয়া বেগমসহ তাদের স্বজন দোলা বেগম, হাসি বেগম, রমজান, তামিম, কবির খান, রসুল আলী খান, অন্যান্যরা আসলে তাদেরকেও হামলা চালিয়ে আহত করা হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় সুমন খানের মাথার ওপরে ধারালো অস্ত্রের মারাত্মক জখম এবং রিজিয়া বেগমের মাথায় ও ডান হাতে মারাত্মক জখম রয়েছে। ঘটনার পরপর সংবাদ পেয়ে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার এসআই আরিফুর রহমান ও তার সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
যা নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। এদিকে হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের জন্য আহতের স্বজনরা থানার দারস্ত হলে কোতয়ালী এসআই মামুন আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকের দেন-দরবারে মামলা না হওয়ায় নানান তদবিরের আশ্রয় নিয়ে গড়িমসি করে। এ নিয়ে বরিশালের স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সন্ত্রাসীদের এমন হামলার ঘটনার সচিত্র ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এক পর্যায়ে থানা পুলিশ মামলা আমলে নেয়। বরিশাল কোতয়ালী থানায় ৬ জন কে আসামী করে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-১০, জিআর ৪০৮/২০২০ কোতয়ালী। এসময় আসামীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম কঠোর নির্দেশ প্রদান করে। ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের আশ^াস প্রদান করেন তিনি। পাশাপাশি এ মামলার দায়িত্ব দেয়া হয় ঘটনার পরে সেখানে উপস্থিত হওয়া কোতয়ালী মডেল থানার এসআই আরিফুর রহমানের কাছে। এদিকে মামলা হওয়ার ৪৮ ঘন্টারও বেশি সময় অতিক্রম হলেও আসামী পক্ষরা এক অদৃশ্য প্রভাব কে কাজে লাগিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পাশাপাশি মামলা দায়ের করা আহতের পরিবারের সদস্যের নানা ধরনের হুমকী দিয়ে বীরদর্পে এলাকায় অবস্থান নেয়।
সূত্রে জানা যায়, আসামীদের এমন হুমকীর মুখে পড়া বাদী পক্ষ একাধিকবার থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলেও মামলার ৪৮ ঘন্টা পার হলেও আসামি ধরতে ব্যর্থ হন থানা পুলিশ। স্থানীয় একটি বিশ^স্ত সূত্রে আরো জানা যায়, লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে থানা পুলিশ। এলাকার বাজারে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। যা নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে এক চাঞ্চল্যকর ধারনা সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, এমন ঘটনার পর আসামী পক্ষরা বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে নানান ধরনের উক্তি ছুড়ে দেয়, “থানা পুলিশ আমাদের পকেটে থাকে, মামলা দেছে তাতে কি হয়েছে, টাকায় বাঘের চোখও মেলে।” হত্যা চেষ্টায় সন্ত্রাসীদের এমন হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ায় ঐ এলাকায় চাঞ্চল্যকর এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়াতে সর্বশেষ গত ৯ জুলাই বেলা ৩টায় আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় অবস্থান করছে এমন তথ্যে নিশ্চিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৮ এর একটি চৌকস দল। এসময় মামলার এজাহারভূক্ত ১নং আসামী সুমন মুন্সী, ৩নং আসামী মামুন মুন্সী ও ৪নং আসামী ইউসুফ মুন্সী কে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ঐ দিনই আসামীদের কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।
মামলার আসামীদের নিয়ে ঐ এলাকায় রয়েছে বিস্তার অভিযোগ। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে এলাকাবাসীর সাথে নানা রকম বিশৃংখল ঘটনার সূত্রপাত জন্ম দেয় তারা। একটি বিশ^স্ত সূত্রে আরো জানা যায়, একটি অদৃশ্য প্রভাব কে পুঁজি করে আসামী সুমন মুন্সী এলাকায় মাদক বিক্রির নিয়ন্ত্রন করে থাকে। এদিকে র্যাবের অভিযানে আসামীদের আটক হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
র্যাব কে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয়রা দৈনিক আজকের তালাশ কে জানান, এমন ঘৃণিত কর্মকা-ে আরো যারা অভিযুক্ত আসামী রয়েছে তাদের আটক করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে র্যাব তাদের দায়িত্ব পালন করে এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনতে অগ্রসী ভূমিকা পালন করবে। এদিকে মামলার বাকি আসামীরা আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম এর সাথে আলাপকালে তিনি দৈনিক আজকের তালাশ কে জানান, আটককৃত আসামীদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার বাকি আসামীদের অতি দ্রুত গ্রেফতারের জন্য অভিযান কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।