প্রতিনিধি ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৮:২৯:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কালিজিরায় এমএম ব্রিকসে অবাধে পুড়ছে কাঠ, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্থ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে জ্বালানী হিসেবে কাঠ পুড়ছে ঝালকাঠি নলছিটি উপজেলার এম এম ব্রিকস। এ পরিস্থিতির কারণে বনাঞ্চলের কাঠখড়িসহ প্রতিদিন সহস্রাধিক মন কাঠখড়ি নিঃশেষ হচ্ছে ভাটার জলন্ত আগুনে। সুত্রে জানা গেছে, নলছিটির মগড় ইউনিয়নের পূর্ব রায়াপুর এলাকার এম এম ব্রিকসে নির্বিগ্নে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। গতকাল সরেজমিনে ইটভাটা এলাকা ঘুরে ভাটার শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাটাটিতে শতশত মন কাঠ খড়ি পোড়ানো হচ্ছে। পুর্ব থেকে ভাটা মালিকেরা তাদের ভাটার পাশ্ববর্তী স-মিলে এ কাঠ গুলো স্তুপ করে রেখেছেন।
এদিকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে কোন ভাটায় ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানী হিসেবে কাঠ খড়ি পোড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাটায় পোড়ানো ইট ও সমুদয় কাঠ আটক করিতে পারেবেন। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখন পর্যন্ত এম এম ব্রিকস এর ব্যাপারে এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তবে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি! এই ইটভাটায় নদীর পাড়ের ফসলী জমি থেকে উর্বর মাটি কেটে সেইসব মাটি দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট এতে একদিকে যেমন নদীর পাড় ভাংছে অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। প্রতিটি ইটভাটায় এক রাউন্ড ইট পোড়াতে সময় লাগে ১২-১৫ দিন। সে হিসেবে একটি মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ রাউন্ড ইট পোড়ানো সম্ভব। এক রাউন্ড ইট পোড়াতে ১০ থেকে ১২ হাজার মন জ্বালানী কাঠের প্রয়োজন হয়।
সে অনুযায়ী একটি ইটভাটায় এক মৌসুমে (০১) এক লক্ষ মণ জ্বালানী হিসেবে সবুজ বৃক্ষ বা কাঠ পোড়ানো হয়। জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় শিশুদের শ্বাসকষ্ট ও স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্থ। সেই সাথে আবাদী জমি ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বর শক্তি হারাচ্ছে। সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে কয়লার জায়গায় কাঠ পুড়ে ইটভাটা পরিচালনা করে আসছেন ইটভাটাটির প্রোপাইটর মো. বাকির মৃধা। সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখিয়ে কোন কিছু তোয়াক্কা না করে তিনি কাঠ পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানায়,‘কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এমএমসি ইটভাটায়। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছি আমরা। আমরা একাধিকবার এর প্রতিবাদ করলেও কোন সুফল পাইনি। তার আওয়ামীলীগীপনা ক্ষমতার দাপটে ও তার নিয়োযিত সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমাদের যেন দ্রুত এই ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করা হয়।’ কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে ইটভাটাটির প্রোপাইটর মো. বাকির মৃধার মুঠোফোনে জানতে চাইলে শুরুতেই তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন।
তিনি বলেন,‘আমার ইটভাটায় আমি কাঠ পোড়াই নাকি মানুষ পোড়াই সেটা একান্ত আমার ব্যাপার, আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে চাই না। আমি কি আপনার চাকরী করি যে আপনাকে কৈফিয়ত দিবো। আমি ব্যবসা করি এই ব্যবসা করেই আওয়ামী লীগ চালাই, রাজনীতি করি।’ আপনি দলীয় কোন পদে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘কালিজিরায় এসে আওয়ামী লীগের খাতায় দেখেন আমার নাম আছে কি না, এখন যারা আওয়ামী লীগ করে তারাতো নব্য আওয়ামী লীগ, আমিই একমাত্র পুরানো খাঁটি আওয়ামী লীগ। আমার পরিচয় অনেক বড়, আপনাদের বরিশালের ৩৯টি পত্রিকার সিনিয়রা সবাই আমাকে চেনে। বড় বড় সিনিয়রা আমার কাছে এসে বসে থাকে।
আমার সাথে সবার সখ্যতা আছে, আপনে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে গিয়ে আমার পরিচয় জানেন। পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন, রাজনীতিবীদ, সাংবাদিক সবাই আমার কাছে এসে বসে থাকে। আমার যা ইচ্ছে তাই আমি করতেছি ভবিষ্যতেও করমু, আপনে কেন কেউই আমার কিছু করতে পারবে না।’ নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিলো না, তবে আমি খবর নিয়ে দেখছি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন,‘কোন ধরনের অনিয়ম করে ইটভাটা পরিচালনা করা যাবে না, নিয়মবহিরর্ভূতভাবে যেসব ইটভাটা চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। আমাদের এই অভিযান অব্যহত থাকবে।’