প্রতিনিধি ১৩ মে ২০২৪ , ১:২৬:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
ইমরান জিহাদ ॥ বরিশাল নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডস্থ কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত লঞ্চঘাট নৌ বন্দর এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, রাত হলেই শুরু হয় রমরমা জুয়ার আসর। শুধু তাই নয় লঞ্চে অবৈধ মালামাল পরিবহনসহ কর্তৃপক্ষের নানান অব্যাবস্থাপনা ও ঘাট ইজারাদারদের অধিক টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে- প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় দুই ভাগে ভাগ করে বিক্রি হচ্ছে মাদক। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলেই শুরু হয় লক্ষ টাকার জুয়ার আসর। এ যেনো মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়িদের রাজ্য হিসেবে পরিনত হয়েছে লঞ্চ ঘাট। রাত হলেই দেখা মেলে এ সব জুয়ারিদের। সারারাত চলে জুয়ার আসর। মাদক সেবনকারীদের নিরাপদ স্পট হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানটি। এখন এগুলো ওপেন সিক্রেট বলে দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে- চিহ্নিত প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা আড়ালে থেকে মাসিক বেতনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেশ কয়েকজন কিশোর বয়সী ছেলেদের দিয়ে বিক্রি করাচ্ছেন এসব মাদক। শুধু তাই নয় লঞ্চ ঘাটে থাকা অসহায় মানুষদের মাদক বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন মাদক ব্যাবসায়ীরা। এ কারনে অল্প পরিশ্রমে আয়ের পথ হিসেবে এ পথ বেছে নিয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্র জানা গেছে – লঞ্চঘাটে যে সকল মানুষ বসবাস করে এদের মধ্যে বেশি ভাগ মানুষের বাড়ি ঘর থাকা সত্বেও অসহায় মানুষের মাঝে মিশে বসবাস করছে। এরা চুরি, ছিনতাই, মাদক বহনসহ নানান অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে লিপ্ত হচ্ছে। প্রায় সময়ই সাধারণ যাত্রীরা এদের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে একাধিক বার সংবাদ প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ প্রশাসন।
স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, নৌ বন্দর পার্কিংয়ের স্থানে যারা এই মাদক বিক্রি করে তাদেরকে পুলিশ কিছু বলেনা, কিন্তু যারা কিনতে আসে তাদেরকে ধরিয়ে দেয় পুলিশের হাতে। এর জন্য কিছু পুলিশের সাথে সু সম্পর্ক গড়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লঞ্চ স্টাফ বলেন, এই ঘাটে প্রতিদিন কয়েকটি স্পটে জুয়ার আসর বসে। এই আসরে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে লক্ষ লক্ষ টাকা খেলা হয়। কখনো কখনো এরা ঘাটে ভেরানো থাকা লঞ্চের কেবিনে নয়তো, লঞ্চ টার্মিনালের পল্টনে নিচে, আবার কখনো যাত্রী ছাউনির পাশে এ আসর বসায়। এদেরকে পাহাড়া দেয়ার জন্য তাদের লোকজন থাকে প্রবেশ পথ গুলোতে। প্রশাসনের উপস্থিতি দেখলেই তাদের সতর্ক করে দেন। তবে বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে সুসম্পর্ক থাকায় দেখেও না দেখার ভান করেন বলে জানান তিনি।
শুধু তাই নয় অনুসন্ধানে উঠে এসেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। বরিশাল নৌ বন্দর থেকে ঢাকাগামী একাধিক লঞ্চে যাত্রী ডেকে উঠানোর নামে নারী ও পুরুষ যাত্রী গায়ে হাত দিয়ে টানা হেছড়াসহ টিকিট বিক্রিতে নানান অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, লঞ্চের কেবিন টিকিট কাউন্টারে না মিললেও দালালরা লঞ্চের সামনে ঘুরে ঘুরে বেশি দামে টিকিট বিক্রির প্রলোভন দেখান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টার্মিনালের দায়িত্বে থাকা একধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু অসাধু দালাল লঞ্চ কাউন্টার কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে কাউন্টারের টিকিট কালোবাজারি করে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাত্রী হয়রানি করে আসছে।
তারা আরো বলেন, এসব নৌ পরিবহনে করে প্রতিনিয়ত অবৈধ কারেন্ট জাল ও অবৈধ পলিথিনসহ বিভিন্ন অবৈধ রিপারিং করা মবিল ওয়েলের ড্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশ করে। এ সকল মালামাল পরিবহনে বারতি টাকা নেয়া হয়। এ কাজের সাথে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই টাকা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও ম্যানেজ করা হয় বলে জানান তিনি।
জানা যায়, লঞ্চ কেবিন টিকিট বিক্রিতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করে লঞ্চমালিকদের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে নির্দেশনার কিছুই পালন করছেন না লঞ্চ মালিকরা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য লঞ্চের কেবিনকে বেছে নিচ্ছেন।
এখানেই শেষ নয় একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সরকারি নির্ধারিত রেড চার্টের তোয়াক্কা না করে বিআইডব্লিটিএ নামে কোন রশিদ ছাড়াই মালামাল বাবদ অতিরিক্ত খাজনা উত্তোলন করছে ঘাট ইজারাদার। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। নির্ধারিত রেট চার্ট টাঙ্গিয়ে দেয়ার দাবি জানান যাত্রীরা।
এ বিষয় বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক আব্দুল রাজ্জাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন।
নৌ সদর থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন- আমরা প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করছি। প্রায়শই বিভিন্ন অপরাধীদের আটক করে আদালতে পাঠাই। সকল অপরাধ দমনে নৌ-পুলিশ সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে।