প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:৩০:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীতে গভীর রাতে পৃথক স্থানে মাছের গাড়ি থামিয়ে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের রোষাণলে পড়ে সটকে পড়তে বাধ্য হয় তারা। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছ- গতকাল ( ৮ নভেম্বর) রাত ১২ টার পরে নগরীর আমতলা মোড় এলাকায় একটি মাছের ট্রাক আটকায় সাংবাদিক পরিচয়দানকারী রফিকসহ ৬/৭ জনের একটি দল। পরে তারা গাড়িতে জাটকা রয়েছে দাবি করে মাছের বস্তা খুলে দেখতে চান। এ সময় ওই গাড়ির ড্রাইভার নেমে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে রফিক নিজেকে বিপ্লবি টিভি নামের একটি অনলাইন পত্রিকার পরিচয় দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তখন ড্রাইভার সাংবাদিকরা মাছের গাড়ি দেখার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে রফিক বলেন আমাদের সাথে পুলিশ আছে। তখন কোতয়ালী মডেল থানার এএসআই রাজ্জাকসহ তার টিম এসে হাজির হন। তিনি হাজির হয়েই অভিযানে মৎস কর্মকর্তা নেই জানতে পেরে চলে যান। পরক্ষণেই স্থানীয়রা জড়ো হয়ে মৎস কর্মকর্তা ছাড়া মাছে গাড়ি আটকাতে পারবে কিনা জানতে চায়। স্থানীয়দের নানামুখি প্রশ্নে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েন রফিক। এরপর সুবিধা করতে না পেরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন রফিক ও তার দলবল।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন- রাতে গাড়ি আটকানোর খবর পেয়ে এএসআই রাজ্জাকসহ পুলিশের একটি টিম গিয়েছিল। তবে মৎস কর্মকর্তা উপস্থিত নেই সেটা শুনে গাড়িটি ছেড়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে একই রাতে নগরীর কাশিপুর বাজার এলাকায় আরেকটি মাছে গাড়ি আটকায় ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় যুবক। পরে তারাও গাড়িতে জাকটা রয়েছে দাবি করে গাড়িতে উঠে মাছের বস্তা খুলে দেখতে চান। পাশাপাশি ড্রাইভারের কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় টহলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের টিম ও এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের টিম। পরে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী। পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সেই ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় যুবক। এর কিছুক্ষনের মধ্যে রহস্যজনকভাবে মাছের ট্রাকটিও চলে যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা ডিবি পুলিশের এসআই রাফসান উপস্থিত সংবাদকর্মীদের বলেন- আমরা টহল ডিউটিতে ছিলাম, তখন জনতার ভিড় দেখে দাড়িয়েছি। তখন জানতে পারি- কতিপয় যুবক ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে একটি মাছের ট্রাক থামিয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা এসআই রিয়াজ উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে এসআই রাফসানের মতো একই বক্তব্য দিয়ে চলে যান।
এয়ারপোর্ট থানার ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন- বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা কঠোর ভূমিকা পালন করছি।
এদিকে সাংবাদিক ও ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী মাছ ব্যবসায়ীরা।
পৃথক এই ঘটনার দুদিন আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনে একটি মাছের ট্রাক আটকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এমন সংবাদ পেয়ে মৎস কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পাঁচ বস্তা (প্রায় ১৫ মণ) মাছ জব্দ করেন। এ সময় ওখান থেকে দুই বস্তা মাছ দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেন্দিগঞ্জের সোহেলের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষার্থী। কিন্তু মৎস কর্মকর্তা দাবিকৃত মাছ দিতে অস্বিকৃতি জানালে হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন সোহেল। মাছ না দিয়ে যেতে পারবে না বলে বিক্ষোভ শুরু করলে বাধ্য হয়ে তাদের দুই বস্তা মাছ দিয়ে আসতে হয়।
এছাড়াও প্রতিনিয়ত বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে মাছের গাড়ি আটকে অহরহ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে বলে দাবি মাছ ব্যবসায়ীদের। তারা এর থেকে প্রতিকারে প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তেক্ষেপ কামনা করেছেন।