প্রতিনিধি ৪ জানুয়ারি ২০২১ , ১০:৪৪:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক: ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের নামে মুলাদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ব্যাপক চাঁদাবাজী করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর খরচ যোগানোর নাম দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লঞ্চ, ইটের ভাটা, ক্লিনিক, ড্রেজার ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারসহ বিভিন্ন অফিস থেকে চাঁদা তুলেছে। বাদ যায়নি সরকারি প্রতিষ্ঠানও। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। করোনা মহামারিতে সীমিত আকারে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের নির্দেশণা ও বাধ্যবাধকতা থাকলেও উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ মুলাদী সরকারি কলেজ মাঠে প্যা-েল সাজিয়ে ব্যাপক আকারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। আর অনুষ্ঠানের খরচ যোগাতে বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা তুলছে। অভিযোগ উঠেছে অনুষ্ঠানে যে টাকা খরচ হবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অনেক বেশি চাঁদা তুলেছে।
জানা গেছে, ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মুলাদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ কয়েক দফা বর্ধিত সভা করে। এর পর থেকেই ঢাকা-মুলাদী চলাচলের ৫/৬টি লঞ্চ, ১৫/২০ ইটের ভাটা, ২টি ক্লিনিক, বেশ কয়েকটি ড্রেজার ও ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তুলে নেয়। এছাড়াও উপজেলার ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে।
মুলাদী-ঢাকা চলাচলের লঞ্চের এক কর্মচারী জানান করোনা মহামারি কালে যাত্রী কম থাকায় লঞ্চের খরচ যোগাতেই মালিক ও শ্রমিকরা হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে মুলাদী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর খরচের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইট ভাটা মালিক জানান করোনা পরিস্থিতি মানুষের হাতে টাকা পয়সা না থাকায় ইট বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। এর মধ্য দিয়েও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য চাঁদা দেওয়া মরার ওপর খরার ঘা এ পরিণত হয়েছে।
উপজেলা ও পৌর ছাত্রলী নেতাকর্মীরা তাদের অনুষ্ঠানের চাঁদা তেলার জন্য উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসেও গিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য কেন এত টাকা তোলা হয়েছে তা নিয়ে খোদ আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তৃণমূল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধারণা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জন্য তোলা টাকা নেতারা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার জন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা তোলার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের কাছ থেকেও চাঁদা নিয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে মুলাদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বছরে একটি মাত্র প্রোগাম করি। করোনার কারণে এবার সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র থেকে। এবার আমরা যে কর্মসূচি নিয়েছে তাতে সর্বোচ্চ হলে ৩০ হাজার টাকা খরব হবে। যা আমার একার পক্ষেই দেয়া সম্ভব। কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ চাঁদাবাজির প্রদান দিতে পারলে যে বিচার হবে তা মাথাপেতে নিব। সামনে ইউপি নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ কারণেই প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
অপরদিকে মুলাদী পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ.এম জুয়েল হাওলাদার বলেন, ‘ভালো কাজ করলে তার সুনাম কেউ করে না। আমরা কোন ধরনের চাঁদাবাজি করছি না। আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাদের কঠোর ভাবে হুশিয়ারি দিয়েছেন, ছাত্রলীগের কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোন চাঁদাবাজি না হয়। এ কারণে আমরা এবার অতিরিক্ত কোন আমন্ত্রন পত্রও বাইনি। মাত্র দুইশ আমন্ত্রনপত্র বানিয়েছি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে দেয়ার জন্য। কেউ চাঁদাবাজির প্রমান দিতে পারলে যা বিচার হবে আমরা তাই মাথা পেতে নিব।