প্রতিনিধি ২২ মার্চ ২০২৩ , ৪:৩৯:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
তালাশ প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। এমনটি অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যা হলেই নদীতে ড্রেজার নামিয়ে বালু উত্তোলন শুরু হয়।
ঝালকাঠির পাঁচ নদীর মোহনা সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ২০ থেকে ২৫টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে বালু উত্তোলনের চিত্র দেখা গেছে। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল গ্রামসহ আশপাশের তিন থেকে চারটি গ্রামে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে সুগন্ধা ও বিষখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকাশ্যে।
দিনে লুকোচুরি করলেও, রাতে প্রকাশ্যে চলছে ড্রেজার মেশিন। চোখের সামনে মানুষের সহায়-সম্পত্তি সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে বিলীন হতে দেখেও বালু ব্যবসায়ীরা তাদের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকছে না। বিষখালী নদীর তীরবর্তী দেউরী, ভাটারাকান্দা, সাচিলাপুর, দিয়াকুল, কিস্তাকাঠি, সুগন্ধা নদীতীরের কৃষ্ণকাঠি, কুতুবনগর, মল্লিকপুর, খোজাখালী, সিকদারপাড়া, ষাইটপাকিয়া, বারইকরণসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য পরিবার ভিটেবাড়ি হারিয়েছেন ভাঙনে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ঝালকাঠি জেলায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙনে স্বাধীনতার পর থেকে বিলিন হয়েছে শতশত একর জমি।
কালিজিরা ব্রিজের ঢালে মেসার্স রাইসা এন্টারপ্রাইজের প্রপাইটর রোমান হাওলাদারের সাথে কথা বলে জানা জায় এই ব্যাবসার নিয়ন্ত্রন অনিক সেরনিয়াবাত নামের এক ছাত্রলীগ নেতার। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া জায়নি। অপরদিকে এই রোমান হাওলাদারকে দেখা গেছে রাতের আঁধারে চুরি করা বালু এক্টি অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে তার খলায় উঠাচ্ছে। বালুবাহী এই জাহাজের মালিক বিপ্লবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ঝালকাঠীতে ইজারা পয়েন্ট আছে সেখান থেকে বালু আনে। ঝালকাঠীর ইউএনও বলেন, আমাদের এখানে কোনো ইজারা পয়েন্ট নেই। যারা বলছেন তারা ভুল বলছেন।
সুগন্ধা নদী তীরবর্তী মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, সুগন্ধার তীরে গড়ে ওঠা ঝালকাঠি শহর ও আশেপাশে গ্রাম নদীতেই ভাঙছে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে দিন রাত অবাধে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। তাদের কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন ২০-২৫টি ড্রেজার দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন করায় ভেঙে যাচ্ছে নদী। অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে। শুধু জরিমানা করেই এদের ঠেকানো যাবে না। ড্রেজার জব্দ করে মালিককে বেশিদিন কারাদণ্ড দিলে বালু উত্তোলন থামানো যেতে পারে।’
কিস্তাকাঠি গ্রামের হাকিম মুন্সী বলেন, ‘আমাদের বাড়ি-ঘর সব নদীতে বিলিন হয়ে গেছে শুধু ড্রেজার দিয়ে বালু কাটায়। নদীতে কোন ঢেউ নেই, স্রোত নেই এরপরেও নদী ভাঙছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখছেন না কেন? একমাত্র অবৈধভাবে ভাঙন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায়ই নদী ভাঙছে। এটা প্রতিরোধ করা না হলে নদী ভাঙতেই থাকবে।’
একই এলাকার বাসিন্দা রিপন হাওলাদার বলেন, ‘বালু উত্তোলনের সঙ্গে প্রভাবশালী একটি চক্র জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না কেউ। তাদের টাকা আছে, আমরা গরিব মানুষ, কথা বললে বিপদে ফেলবে। আমরা নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ চাই, পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
‘স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন যদি এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা না নেয় তাহলে ব্যাহত হবে সরকারের উন্নয়নের জোয়ার। হারিয়ে যাবে হাজার হাজার একর জমি ও বাড়ি-ঘর।