দেশজুড়ে

বেলতলা খেয়াঘাটের ইজারাদারের দৌরাত্ম্য থামাবে কে?

  প্রতিনিধি ৮ মে ২০২২ , ৮:৩৪:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক ॥ ঈদ উপলক্ষে বরিশাল বেলতলা খেয়াঘাট (কীর্তনখোলা) থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। আর এই ঈদকে পুঁজি করে যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে নাড়ীর টানে কয়েক হাজার যাত্রী বেলতলা খেয়াঘাট হয়ে তাদের বাড়ি ফিরেছেন আবার খেয়াঘাট হয়ে বর্তমানে কর্মস্থলে ফিরছেন। ঈদ যাত্রী এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে ঈদের আগের দুই দিন থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত প্রতিটি যাত্রীর কাছ থেকে ১০টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মোটরসাইকেল প্রতিও বেশি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। মোবারক আলী নামে এক যাত্রী বলেন,‘ঈদ আসলেই খেয়াঘাটের ইজারাদারদের মনে হয় মৌসুম শুরু হয়! সাধারন মানুষকে জিম্মি করে তারা ভাড়া আদায় করছেন, এটি দেখার মতো কি কেউ নেই?’ অন্যদিকে ঈদ ছাড়াও এই খেয়াঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিক ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া নিতে দেখা গেছে। বাড়তি এই ভাড়া নেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ কিংবা অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার মেলেনা। এর ফলে বরিশালের সাথে চরমোনাই ইউনিয়নের সংযোগে থাকা বেলতলা খেয়াঘাট এখন জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায়ের ঘটনা জেলা পরিষদের ইজারা দেওয়া বেলতলা খেয়াঘাটে (কীর্তনখোলা) এমন নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, বরিশাল জেলা পরিষদের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পেশী শক্তির প্রভাব দেখিয়ে এসব বিতর্কিত কর্মকান্ড করছে ইজারাদার।

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সেখানে জেলা পরিষদের নির্ধারিত খেয়া পারাপাড়ের ভাড়ার তালিকা টানানোর কথা থাকলেও তা কখনোই চোখে পড়েনি যাত্রীদের। তবে ‘পারাপারে নির্ধারিত চার্ট ইজারাদারের নিজ দায়িত্বে লাগানোর কথা। কিন্তু বেলতলা খেয়াঘাটে ইজারাদার নির্ধারিত চার্ট না লাগানোয় ৫নং চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ জিয়াউল করীম এর পক্ষ থেকে অস্থায়ীভাবে একটি রেট চার্ট লাগানো হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওই চার্টের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করে ঘাট ইজারাদার। চার্টের নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষকে লাঞ্চিত হতে হয় এই ঘাটে। ফলে মান সম্মানের ভয়ে নিরবে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে চলাচল করেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিজন যাত্রীর ভাড়া ৪ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। চালকসহ সাইকেলের ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারিত হলেও ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। চালকসহ মোটরসাইকেলের ভাড়া ১২ টাকার পরিবর্তে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। রিকসা-ভ্যান- ঠেলাগাড়ী প্রতিটি ১০ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

গরু-মহিষ প্রতিটি ১২ টাকা ভাড়ার পরিবর্তে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। ছাগল ভেড়া প্রতিটি ৩ টাকা নির্ধারিত ভাড়ার বিপরিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও মালামাল থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন থেকে তিনগুন ভাড়া আদায় করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, প্রতিবন্ধী, সরকারি ও আধা সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাড়া না নেয়ার কথা থাকলেও তাদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রাত ৯টা বাজার সাথে সাথেই ভাড়া বেড়ে ৪ থেকে ৫ গুন হয়ে যায়। আবার রাত ১২টার পরে নদী পার হতে হলে লাগবে ২০০ টাকা। প্রতিবাদ করলে ভাড়া বেড়ে যায় তখন।

যাত্রীদের আরও অভিযোগ, শুধু অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েই থেমে থাকেন না তারা অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েও খেয়া পারাপার করে থাকে ওই খেয়া ঘাটে। পাশাপাশি অদক্ষ চালক দিয়ে খেয়ার ট্রলার চালানো হয় ওই ঘাটে। অনেক সময় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট দেরি করেও খেয়া ছাড়ে চালকরা। প্রখর রোদের মধ্যে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি কোন যাত্রী ছাউনির। এ বিষয়ে বেলতলা খেয়াঘাট (কীর্তনখোলা) এর ইজারাদার হিরার (হিরা মাতুব্বর) কাছে জানতে চাইলে তিনি আজকের তালাশকে জানান, গত বছর যে ভাড়া নেয়া হয়েছে সেই ভাড়াই নেয়া হচ্ছে তার থেকে বেশি ভাড়া নেয়া হয় না। সেই ভাড়া জেলা পরিষদের নির্ধারিত ভাড়া কিনা জানাতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবছর আরও বেশি টাকা দিয়ে ডাক নেয়া হয়েছে। নির্ধারিত ভাড়া নিলে টাকা উঠাবো কি করে? অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে ৫নং চরমোনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করীমের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি আজকের তালাশ’র এই প্রতিবেদককে জানান, জনগণের কথা চিন্তা করে জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া যেন নেয়া হয় সে লক্ষে একটি চার্ট ওখানে টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তিনি জনসাধারণকে চার্টে উল্লেখিত ভাড়া দিয়ে পাড়া-পাড় হওয়ার জন্য বলেন। এ বিষয়ে জানতে বরিশার জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। উল্লেখ্য, বেলতলা খেয়াঘাটসহ বরিশালের বেশ কয়েকটি ঘাট ইজারা মুক্ত করেছিলেন আধুনিক বরিশালের রূপকার প্রয়াত সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন। সাধারন মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন দেখে তিনি বরিশাল নগরীর চরকাউয়া, চাঁদমারি ও বেলতলা খেয়াঘাট ইজারা মুক্ত করেছিলেন। তবে সেই সুফল বেশিদিন ভোগ করতে পারেনি বরিশালবাসী। কেননা ইজারা মুক্ত করার ১৫ দিনের মাথায় তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে। এর পরেই এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল বেলতলা খেয়াঘাটটি ইজারা নেয় আর শুরু হয় নির্যাতনের নতুন ইতিহাস।

আরও খবর

Sponsered content