দেশজুড়ে

ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা-মায়েরা

  প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১:৪০:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

মজিবর রহমান নাহিদ ॥ প্রায়ই আমরা পত্রিকার পাতা, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে দেখতে পাই ‘ছেলের হাতে বাবা খুন’, ‘মাকে রাস্তায় ফেলে গেলেন ছেলে’। এমন অজস্র সংবাদ প্রায়ই আমাদের সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় নেশার টাকার জন্য বাবাকে ছেলে খুন করছে, বউয়ের জন্য মাকে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। দেশে অনেক বৃদ্ধাআশ্রমে প্রতিদিন অসংখ্য বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তাদের সন্তানেরা। অথচ ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস আসলেই এসব সন্তানদের ভালোবাসা উৎলে উঠে। স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকেরাই বেশি পালন করে এই দিনটি। কিন্তু ভালোবাসা কি শুধু এদের জন্য? বাবা-মায়েদের জন্য কি কোন ভালোবাসা নেই! আমার দেখা বেশ কয়েকজন যুবককে দেখেছি তারা ভালোবাসা দিবস আসার আগেই প্লান করতে থাকতে এই দিনটিতে তার প্রেমিকাকে নিয়ে কি কি করবে।

 

বাহারী পোষাক পড়ে নগরীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুড়ে বেড়ায়। বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে দামী খাবার খায়। অথচ পিতা-মাতাকে কোনদিন রেষ্টুরেন্টে নিয়ে কিছু খাওয়ানতো দূরের কথা হাতে করে একটি চলকলেট ও নিয়ে যায়নি বাসায় তাদের জন্য। বরিশাল বিভাগের কোন এ গ্রামে শফিকুল সরদার ও তার স্ত্রী বসবাস করতেন। বিয়ের বেশ কয়েকবছর পরেও তাদের সন্তান হয় নি। অনেক চেষ্টার পরে তাদের কোলজুড়ে এক ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। অনেক আদর-যন্তে বড় হতে থাকে তাদের সন্তানটি কিন্তু ছেলেটির যখন ৬ বছর তখনই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ইন্তেকাল করেন শফিকুল সরদার। শফিকের স্ত্রী অনেক কষ্ট করে তার ছেলেটিকে বড় করে তোলেন। ছেলেটির যখন বিয়ের বয়স হলো তখন শফিক সরদারের স্ত্রী তাকে বিয়ে করিয়ে দেয়। কিন্তু এটিই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো শফিকের স্ত্রীর জন্য। ছেলে বউকে নিজের মেয়ের মতো আদর করলেও ছেলের বউ একটুও সহ্য করতে পারতো না তার শাশুড়ীকে। এর মধ্যে শফিকের স্ত্রী প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন।

 

বাসায় কোন কাজ করতে না পারায় তার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করতেন ছেলে বউ। বৃদ্ধ ওই মহিলা যাতে বিছানায় মলমূত্র ত্যাগ করে বিছানা নষ্ট না করেন সেই উছিলা নিয়ে ছেলে বউ তার শাশুড়িকে শুধুমাত্র এক বেলা খাবার দিতেন। খাবারের জন্য প্রতিটা মুহুর্ত ছটফট করতেন বৃদ্ধা মহিলাটি। শেষমেষ বৃদ্ধা ওই মহিলাটিও মারা গেলেন। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস শফিক সরদারের ছেলের বউ ও একই ভাবে পুত্রবধূর অবহেলায় মারা গেছেন। টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকায় প্রায় ঈদে ও বিভিন্ন উৎসবে আমি যেতাম বৃদ্ধা আশ্রমে। বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের দেখে কোন বারই চোখের পানি না ফেলে আসতে পারতাম না। যতটুকু পেরেছি তাদের সাথে সময় দিয়েছি। দুনিয়াটা কতই নিষ্ঠুর তাইনা? যে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য সারাটা জীবন পরিশ্রম করে গেছেন সেই সন্তানরাই তাদের জীবনের শেষ সময়ে তাদের খোঁজ-খবর রাখছেন না!

 

অনেক বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে না থাকলেও বাসায় বসেই মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সেসব বাবা-মায়েরা বুকভরা কষ্ট নিয়েই পার করছেন জীবনের শেষ সময়টুকু। একটা কথা আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত আমরা আমাদের বাবা-মায়ের সাথে যেমনটি করবো আমাদের সন্তানরাও কিন্তু ঠিক তেমনটিই করবেন। আর ভালোবাসা মানে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই নয় এর সবচেয়ে বেশি দাবীদার বাবা-মায়েরা। যাদের বাবা-মা বেঁচে নেই তারাই একমাত্র বুঝেন যে বাবা-মা কত বড় নেয়ামত। তাই আসুন আমাদের মধ্যে যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন তাদের সেবা যত্ন করি এবং বিশেষ বিশেষ দিনে তাদের সময়।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা-মায়েরা এটাই কামনা করছি। লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও তরুণ সংগঠক।

আরও খবর

Sponsered content