প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ , ১০:০২:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল অফিস :-
বরিশালে রাতের আধারে নিন্মমানের সামগ্রি দিয়ে ব্রিজ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পায়নি। সূত্র জানায়, ২০১৮ ও ২০১৯ অর্থবছরের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের সোলনা বাজারের খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঠিকাদার ব্রিজ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে।
এমন অভিযোগ পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা কয়েকদিন পূর্বে দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে ব্রিজ নির্মাণের কোন শ্রমিক পায়নি। কাজ বন্ধ থাকার কারন জানতে চাইলে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ‘ব্রিজ নির্মানের জন্য যে পরিমান মালামালের প্রয়োজন তা না দিয়ে সাব কন্টেকটাররা কাজ করিয়েছিলেন এতে আমরা স্থানীয়রা অভিযোগ করলে তারা দিনে কাজ না করে রাতের আধারে কাজ করেন।’
স্থানীয়রা আরও বলেন, আমরা এব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে ঠিকাদারদের রাতে কাজ না করার জন্য নির্দেশ দেয়। এতে কিছুদিন রাতে কাজ বন্ধ থাকলেও পুনরায় আবার কাজ শুরু করেন তারা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা অধিদপ্তরের অর্থায়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ রাস্তায় সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে মেসার্স কাওছার এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী ঝন্টু ২০ লাখের অধিক টাকা ব্যয়ে ওই কাজটি পায়। সে কাজটি বিক্রি করে দেয় স্থানীয় ইউপি সদস্য নাঈম, আওয়ামী লীগ নেতা ফাইজুল ইসলাম পলু ও ছাত্রলীগ নেতা তারেক সিকদারের কাছে। তবে কাজটির বেশি তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন ইউপি সদস্য নাঈম ও ছাত্রলীগ নেতা তারেক সিকদার। আর এদের প্রভাবের কারনেই দিনের কাজ রাতে হয় বলে জানায় স্থানীয়রা।
আরও ত্রকটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, তারেক সিকদার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মচারী। তিনি তার সিটি কর্পোরেশনের কাজ ফাঁকি দিয়ে এই ঠিকাদারী কাজ করছেন। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যখন নগরভবনের সকল দূর্নিতীবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে এমনকি কাউন্সিলরদের ঠিকাদারী কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন সেখানে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী হয়ে তারেক কিভাবে কাজ ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারী কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন সেই প্রশ্ন এখন সবার মাঝে।
তারেক সিকদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,‘আমরা দিনেই কাজ করি তবে দু/একদিন কাজ করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।’ সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী কিভাবে দিনে অফিস না করে ঠিকাদারী করে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটি আইনে আছে। পরে অবশ্য তিনি কথার সুর পাল্টিয়ে বলেন আমার উর্দ্বতন কর্মকতার নলেজে আছে বিষয়টি।
এদিকে আবারও ঘটনাস্থলে কাজের অগ্রগতি দেখতে উপস্থিত হয় বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীরা। পরে তাদের ম্যানেজের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন ছাত্রলীগের নামধারী তারেক সিকদার। এই প্রতিবেদকের কাছে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানায়।
অফিস ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজ ফাঁকি দিয়ে বাহিরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই, অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কামরুজ্জামান জানায়, ‘কিছুদিন পূর্বে স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতের কাজ বন্ধ করে দেই এবং পরবর্তীতে যেন রাতের কাজ না করে সেজন্য নির্দেশনা দিয়ে আসি। তারা আবার যদি রাতে কাজ শুরু করে তবে কাজটি বন্ধ করে দেয়া হবে।’