অপরাধ

এক সুজনের বিতর্ক ছাড়াতে পারছে না বরিশাল ছাত্রলীগ!

  প্রতিনিধি ২ এপ্রিল ২০২৩ , ৮:৩৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

তালাশ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সুজন কয়েকদিন পরপরই নানা বিতর্কিত ঘটনা জন্ম দিয়ে নিজেকে আলোচনায় রাখতে পছন্দ করেন! একের পর এক বিতর্কিত কাজ করে বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেও বেশ খেতাব পেয়েছেন তিনি। এবার ফেইসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করলেন বরিশাল সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান সুজন।

 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বরিশাল ছাত্রলীগ কে পরিচালনায় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে নেতৃবৃন্দরা যার কারন হিসেবে অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের এসব উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলা যায় । একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইমেজ নষ্ট হবার উপক্রম ঘটছে।

 

সম্প্রতি তার ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে এসে আত্মহত্যা করার ঘোষণা দেয়ার মুহুর্তের মধ্যে আত্মহত্যা করার ঘোষণার বিষয় টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা ঝড় উঠে।বিষয় টি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে এ ঘটনার কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে বিষয় টি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

 

বিতর্ক সৃষ্টি করা ওই ছাত্রলীগ নেতা সুজনকে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত ও সাধারণ সম্পাদক আঃ রাজ্জাক সাক্ষরিত ছাত্রলীগের প্যাডে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এতে ধারনা করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভাবে বিষয় টি সংগঠনের ইমেইজ রক্ষার্থে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের কাছে কঠোর ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে।

 

এরআগেও তিনি নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি করে আলোচনায় এসেছিলেন। কিন্তু আলোচিত হতে গিয়ে হয়েছেন প্রতিবারই সমালোচিত এতে হয়েছিলেন বহিষ্কারও।

 

গত শুক্রবার (৩১ মার্চ) রাত ১১টার দিকে নিজ ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভে এসে আত্মহত্যার ঘোষণা দেন সুজন। তাৎক্ষণিক তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এ নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক লাইভে এসে সুজনের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তার শাস্তি দাবি করেছেন নেটিজেনরা।

 

ঘটনার পর দিন শনিবার (১-এপ্রিল) ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজনের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) পাঠানো হয়। সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় তাকে এ শোকজ করা হয়েছে বলে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগ জানায়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সেরনিয়াবাত সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনি (আশিকুর রহমান সুজন) আপনার নিজস্ব ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন অনৈতিক ও কুরুচিপূর্ণ অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করায় কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, পত্র প্রাপ্তির তিন কার্য দিবসের মধ্যে তা জানানোর নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

 

ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সুজন লাইভে এসে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেছিলেন, “আত্মহত্যার কারণ পারিবারিক নয়; পারিবারিকভাবে আমি সুখি। এমন অবস্থায় পড়েছি, নিজের তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও বলতে পারছি না কিছু। আমার আত্মহত্যার কারণ রুটি-রুজির জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ যে জায়গা থেকে আমার আয়ে সংসার চলতো সেই পথ শনিবার থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওই জায়গা হারিয়ে ফেলব কাল (শনিবার)। তাই কোনো পথ না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।” ১০ মিনিটের ওই ফেইসবুক লাইভে আসার দুই ঘণ্টা আগে সুজন তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছিলেন, কাল হয়তো আত্মহত্যা করতে পারি???? কারণটা ডায়রিতে লেখা থাকবে… হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও…

 

পোস্টে সুজন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলসহ জেলার সাত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে ট্যাগও করেছিলেন। সুজনের এই বিতর্কের সৃষ্টি করায় নেটিজেন অনেক উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের আগামীর ছাত্রলীগের ভাটা পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি আত্মহত্যা করার প্ররোচনায় পড়ার আশংকা করেন একাধিক ছাত্রলীগের অনেক নেতা কর্মীদের অভিভাবকরা। তারা এমন কর্মকান্ড করার জন্য দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবী জানায়। না হলে ভবিষ্যতে তাদের সন্তানরাও তার পথ বেছে নিলে এর দায় কে নেবে এ বিষয়ও প্রশ্ন ছোড়ে শীর্ষক নেতৃবৃন্দের কাছে।

 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সুজনের মুঠোফোনে কল দিয়ে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে ফোন দিবো, এখন কিছু বলতে পারবো না। সন্ধ্যার পরে ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেন নি।

 

তবে বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনে আত্মহত্যা কোন অপরাধ না হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করা অপরাধ। কেউ আত্মহত্যা করে নিহত হলে আইন তো আর তাকে শাস্তি দিতে পারবে না। তবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আইন তাকে ঠিকই সাঁজা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশে বলবত দন্ডবিধির (পেনাল কোড-১৮৬০) ৩০৯ ধারায় এ বিষয়ে উল্লেখ আছে। ১৮৬০ সালের এই আইনে আত্মহত্যাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করার উদ্যোগ নেয় বা আত্মহত্যার উদ্দেশে কোনো কাজ করে, সে ব্যক্তি এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবে। তবে আইনে যেহেতু সশ্রম কারাদন্ডের বিষয়টি উল্লেখ নেই সেহেতু সাঁজা হবে বিনাশ্রম কারাদন্ড।

 

আইন অনুযায়ী সুজনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন- লাইভটি আমি দেখিনি, মানুষের কাছে সুনেছি। সুজন আমার এলাকার বাসিন্দা হলেও তিনি বরিশালে থাকেন।

 

দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারার বিধান মতে সুজনের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় এটিই এখন দেখার অপেক্ষা।

 

প্রিয় পাঠক শুধু এই ঘটনাই নয়, সুজনের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও একাধিক অভিযোগ। একটু পিছনে ফিরে তাকাতে চাই আমরা, ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর বেশ কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম ছিলো এমন ‘বরিশাল ছাত্রলীগ নেতা সুজনের প্রকাশ্য সন্ত্রাস, থানায় জিডি’ হ্যাঁ সুজনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছাত্রলীগ কর্মী সিদ্দিকও।

 

‘বরিশাল জুড়ে ছাত্রলীগ নেতা সুজনের ত্রাস, সহিষ্ণু শহরে শুরু হলো রাজনৈতিক সন্ত্রাস’ এটি বিগত বছরের কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম। এরকম বহু বার নানা কর্মকান্ড করে নিজেকে তথা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করছেন সুজন।

 

বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমানকে ‘আহাম্মক’ বলেও অভিহিত করেন। এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল ফেসবুকে।

 

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের কর্মীদের মারধর করার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

 

বরিশালে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হাতুড়ি পেটার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সুজনসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

 

অন্যদিকে রেনু পোনার সিন্ডিকেট সহ নানা অবৈধ কাজের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রনের অভিযোগও রয়েছে সুজনের বিরুদ্ধে।

 

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ নানা অভিযোগে তাকে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। বহিস্কারের পরে বরিশাল সদর উপজেলাবাসী সহ বরিশাল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এলেও অদৃশ্য কারনে জেলা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার কারনেই গত বছরে আবারও বহিস্কার আদেশ উঠিয়ে সুজনকে স্বপদে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায় ।

 

পদ ফিরে পাওয়ার পরেই আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে ছাত্রলীগ সংগঠনের নামকে বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়ে ইমেজ নষ্ট করে আসছে সুজন।

আরও খবর

Sponsered content