প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২১ , ৬:৪১:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
জলবায়ু সুবিচারের বৈশ্বিক লড়াইয়ে বাংলাদেশের তরুণরা অনেক সক্রিয়। বাংলাদেশের তরুণরা সরব এবং তাদের কন্ঠস্বর শোনাও হচ্ছে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় সংকট মোকাবিলায় তরুণদের কথা বলা এবং তাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বৃহস্পতিবার রাতে (১২ আগস্ট) জাতিসংঘের কার্যক্রম ও জলবায়ু বিষয়ক বৈশ্বিক আলোচনায় তরুণদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ শিরোনামে ভার্চুয়াল যুব সংলাপে কথাগুলো বলেন। আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২১’র প্রতিপাদ্য খাদ্য ব্যবস্থার রুপান্তর: মানবজাতি ও ধরীত্রির স্বাস্থ্যের জন্য যুবদের উদ্ভাবন তুলে ধরে তিনি সারা দেশের তরুণদের বৈশ্বিক চিন্তা করতে এবং স্থানীয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
আন্তর্জাতিক যুব দিবস ও কোস্টাল ইয়ুথ একশন হাবের বছরপুর্তি উপলক্ষে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং প্রতীকি যুব সংসদ (বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্ট) যৌথভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ কর্ম সূচির সাথে যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন দুই বিশেষজ্ঞ প্যানেলিস্ট ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশ কর্মসূচির টিমলিডার জেরি ফক্স এবং একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার ইয়াং পিপল নাজমুল আহসান। তরুণ জলবায়ু কর্মীদের পক্ষে সোহানুর রহমান কেনো তুরণদের কথা শোনা উচিত এবং বৈশ্বিক জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য তাদের দাবি, কার্যক্রম এবং সাফল্যগুলো কিভাবে জড়িত এ বিষয়ে একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সারা দেশে থেকে ১০০ জনেরও বেশি তরুণ জলবায়ু কর্মী উৎসাহের সাথে সংলাপে অংশ নিয়েছিলো।
বাংলাদেশের তরুণদের জলবায়ু আন্দোলনকে সমর্থন করে তিনি বলেন, “আমাদের জলবায়ু, এটি ভবিষ্যতের জন্য। তোমরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং বর্তমান। তাই সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা বলি যে আমরা আমাদের পৃথিবীটাকে তোমাদের জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষা করতে হবে। আমরা আমাদের দায়িত্ববহ বলে মনে করি। ” এছাড়া জলবায়ু সংকটের গুরুত্বের কথা বলার সময়, রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিভিন্ন জীবিকার মানুষ, কৃষক, জেলে এবং বিভিন্ন লিঙ্গ পরিচয় বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব ও বিপদাপন্নতার তুলে ধরে তাদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহবান জানান ।
সংলাপে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘‘রুপান্তরমূলক উন্নয়ন ধারায় বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে তরুণ সমাজ। তরুণদের কথা আর উপেক্ষা করা হয় না। আমি আশ্বস্ত করতে পারি তোমরা এখন আরা অগ্রাহ্য নও।’’ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের তরুণরা অসাধারণ কাজ করছে। বাংলাদেশের তরুণদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং পৃথিবী বাঁচাতে গৃহীত উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে এই মহান কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য তরুণদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, কাজ এবং প্রতিশ্রুতিকে অভিনন্দন জানিয়ে সর্বদা তরুণদের কথাকে বিবেচনায় নেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং নিশ্চিত করবেন যে এটি তার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় পৌঁছায়। তরুণদের ‘জলবায়ু দূত’ হিসেবে অভিহিত করে, তিনি তাদের যেকোন প্রস্তাব এবং দাবি তাঁর কাছে সরাসরি পাঠাতে বলেন। তিনি তরুণদের তাদের যোগাযোগের দক্ষতা এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বিকাশের পরামর্শ দেন যাতে তাদের কথা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছায়। তিনি গ্রেটা থুনবার্গের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে সে সুইডিশ এবং তার মাতৃভাষাও সুইডিশ। তবুও যখনই সে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জলবায়ু সম্পর্কে কথা বলে তখন উন্নত যোগাযোগের জন্য সে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইয়ুথনেটের তরুণদের পরিচ্ছন্নতা কাজের প্রশংসা করে রাষ্ট্রদূত তরুণদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতকে পর্যটক এবং সামুদ্রিক দূষণ থেকে পরিষ্কার রাখতে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তরুণদের উচিত তাদের এলাকা জলবায়ু সংবেদনশীল করার চেষ্টা করা এবং অভিযোজন ও সহনশীলতা গড়ে তোলার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অবদান রাখা।
অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা ও ভার্চুয়াল প্রদর্শনী ‘ক্লাইমেট ক্লিক’ বিজয়ী ৫ তরুণের নাম ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন সাতক্ষীরার এসএম শাহিন আলম, ২য় বরিশালের আধিয়ান আলেন্দে, ৩য় কক্সবাজারের জিমরান মো: সায়েক, ৪র্থ পিরোজপুরের কৌশিক কুমার দাস এবং ৫ম স্থান অধিকার করেন নোয়াখালীর মো: ইমরান হোসেন।
ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া প্রসঙ্গে এসএম শাহীন আলম বলেন, ‘শত কথা একটি ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যে বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। তৃণমূল থেকে আমাদের সমস্যা আমি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া আমার কাছে যতটা না গর্বের তার থেকে বেশি গর্বের জায়গা আমরা যে ভালো নেই তা জানাতে পারছি।