Uncategorized

বরিশালে নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ!

  প্রতিনিধি ২০ জুলাই ২০২২ , ১২:১৭:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

তালাশ প্রতিবেদক:

বরিশালে এক নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে মন্দিরে হামলার অভিযোগ তুলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে পলাশ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে।

 

 

মঙ্গলবার (১৯জুলাই) রাত ৯টায় বরিশাল নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের আল মদিনা সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

 

 

স্থানীয় নুপুর বেগম নামে এক নারী জানান,’সন্ধ্যার পরে আমি রাস্তায় বের হয়ে আমার এক আত্বিয়র বাড়িতে যাওয়ার সময় অন্ধকারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন যুবকের মধ্যে একজন আমার গায়ে সিগারেটের ধোয়া দেয়। আমি এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে অশ্লিল মন্তব্য করে আমার গায়ে এসে পড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।’

 

 

নুপুর আরও জানান,’পরে বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিক আমার ননদের জামাই মিলন রাঢ়িকে ফোন করে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন৷ ঘটনাস্থলে আসার পর তিনি ওই তিন যুবকের সাথে এই ঘটনার কারন জানতে চাইলে তারা মারমূখি হয়ে উঠেন। পরে নিতাই ঘড়ামি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই তিন যুবককে সড়িয়ে নিয়ে যায়।’

 

 

নুপুরের স্বামী রমজান হাওলাদার জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন এই এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে বসবাস করে আসছি, কখনও আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ হয় নি। যে তিন যুবক আমার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তারা আমাদের এলাকার কেউ না। তারা বহিরাগত, বিভিন্ন সময় মাদক সেবন করে আমাদের এলাকায় ঘোরাফেরা করেন। তাদের মধ্যে একজনের নাম পলাশ। তার নামে মাদক মামলাও রয়েছে।’

 

 

রমজান আরও জানান,’আমি এই ঘটনা শোনার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি পলাশ সহ ওই তিন যুবক আমাদের এলাকার গণেষ মিস্ত্রি বাড়িতে আছে। আমি আমার দুলাভাই, স্ত্রী ও আমার ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে আমার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহারের কারন জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে উঠে পলাশ। পরে আমি তাকে ২/৩ টা থাপ্পর মাড়ি, থাপ্পর মারার পরপর পলাশকে না শাসিয়ে আমার উপর মারমুখি হয়ে উঠেন ওই বাড়ির মন্দির কমিটির নিতাই ঘড়ামি সহ অন্যান্যরা। পরে তোপের মুখ মান-সম্মান বাচাতে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’

 

 

রমজানের দুলাভাই মিলন রাঢ়ি জানান,’আমরা গণেষ মিস্ত্রির বাড়ি থেকে চলে আসার পরে শুনতে পাই আমরা নাকি মন্দিরে হামলা-ভাংচুর করেছি। একজন নারীর সাথে খারাপ আচারনের প্রতিবাদ করায় আমাদের অপরাধী বানিয়ে দেওয়া হলো। ওই তিন বখাটে যুবক নিজেদের দোষ ঢাকতে এই সাম্প্রদায়িক ইস্যু দাড় করিয়ে দিলেন।’

 

 

এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার শারমিন সুলতানা রাখি, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিমুল করিম, ওসি (তদন্ত) লোকমান হোসেন।

তারা উভয় পক্ষের কাছ থেকেই তাদের অভিযোগ শুনেন।

 

 

পলাশ অভিযোগ করে বলেন,’আমরা মন্দিরে প্রার্থনা করতে ছিলাম, কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকজন মুসলমান এসে আমাদের উপর হামলা চালায়, মন্দির ভাংচুর করেন।’

 

 

কি কারনে আপনাদের উপর হামলা করা হয়েছে এমন প্রশ্নে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে কোন সদোত্তর দিতে পারেনি পলাশ।

 

 

ধলু নামে আরেক ব্যক্তি বলেন,’আমি সহ আরো কয়েকজন মন্দিরে প্রার্থনা করতে আছিলাম, এর মধ্যেই কয়েকজন মন্দিরে ঢুকে আমাগো মারধর শুরু করে। আমারে কয়েকটা ঘুষি দেয়, আমি বুকে ব্যাথা পাই।’

 

তবে কি কারনে মারধর করা হয়েছে এর কোন উত্তর দিতে পারেনি ধলুও নিজেও।

 

 

পরে রমজান হাওলাদার, তার পিতা মোতালেব হাওলাদার ও দুলাভাই মিলন রাঢ়িকে আটক করে পুলিশ। একইসাথে ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পির সাথে আসা মামুন নামের এক ব্যক্তিকে দেশিয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়। তবে তার কাছ থেকে কি উদ্ধার করা হয়ে এব্যাপারে পুলিশের কাছ থেকে স্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

 

 

রাত আনুমানিক ১২ টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আলী আশরাফ ভুঞা।

 

এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নি।

 

 

অন্যদিকে এ ঘটনায় আহত নুপুর বেগমকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তার বোন।

 

 

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানা যায়।

আরও খবর

Sponsered content