Uncategorized

বরিশালবাসীর জন্য একটি বেদনাদায়ক দিন আজ

  প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬:০৪:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

মারুফ হোসেন :- বরিশালবাসীর জন্য একটি বেদনাদায়ক দিন ৯এপ্রিল। এই দিনটিতে চীর বিদায় নিয়েছিলেন আধুনিক বরিশালের রূপকার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র,বরিশাল সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরন। গত ২০১৪ সালে ৯ এপ্রিল তিনি বরিশালবাসীকে কাঁদিয়ে ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুর এত বছর পূরণ হতে গেলেও শওকত হোসেন হিরন বেঁচে আছে বরিশালবাসীর হৃদয়ে। আধুনিক বরিশালের রূপকার এই ব্যক্তিটিকে নিয়ে সোরহাব নামে নগরের এক ব্যাক্তি আজকের তালাশকে বলেন,” শওকত হোসেন হিরন যিনি বরিশাল নগরীর জন্য যে উন্নয়ন করেছেন তা অতিতের কোন মেয়র করেননি। তার বহু কষ্টের জন্যই আমরা বরিশালবাসী পেয়েছি একটি সুন্দর নগরী। আমরা তাকে কোনদিন ভূলবো না।”
আতিকুর রহমান খান বলেন, “ভালো মানুষ যে বেশি দিন বেঁচে থাকে না শওকত হোসেন হিরন তার প্রমাণ শওকত হোসেন হিরন। তিনি বরিশালের জন্য যা করেছেন তা ভোলার নয়, তার কাছে আমরা বরিশালবাসী কৃতজ্ঞ।”

আজ ৯ এপ্রিল শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিকে কেন্দ্র করে শওকত হোসেন হিরনের হাজার ভক্ত মসজিদে মসজিদে দোয়া, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরন,মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন।
জন্ম ও শিক্ষাঃ
বরিশাল নগরীর আলেকান্দায় মামার বাড়িতে ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর শওকত হোসেন হিরণ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালীশুরি ইউনিয়নের আড়াইনাও গ্রাম। তাঁর পিতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল হাসেম সরদার এবং মাতা গৃহিনী জয়নব বেগম। চার পুত্র ও ছয় কন্যার মধ্যে তিনি তৃতীয়। শৈশব থেকে শুরু করে তার সারাজীবন কেটেছে আলেকান্দায়।
তিনি বরিশাল নগরির নুরিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন। এরপর বি এম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং স্নাতক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বরিশাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন।
ব্যক্তি ও কর্মজীবনঃ
হিরণের স্ত্রী সমাজসেবিকা জেবুন্নেছা আফরোজ । তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সুইডেনে পড়াশোনারত মেয়ে রোশনী হোসেন তৃণার বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ছোট ছেলে সাজিদ হোসেন রাফসান ঢাকার বিএএফ শাহিন কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। তিনি বসবাস করতেন নগরীর রিফুজী কলোনী এলাকার ডেঙ্গু সরদার রোডের ওহাব বাড়ির ‘হিরন পয়েন্ট’ নামের বাসায়।
পেশায় তিনি ছিলেন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। এছাড়া তিনি সাউথ এ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল লিমিটেড, বেলস লিমিটেড, বেলস ফার্মা ইউনানি প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাভান্স অ্যাসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, এইচ পি এল ও এইচ পি এল শিপিং এবং সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী, সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও বেলভিউ মেডিক্যাল সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালকসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলো ।
রাজনৈতিক জীবনঃ
বরিশাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করার পরে তিনি যোগ দেন জাসদ ছাত্রলীগে। তারপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এবং ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ঐবছর অপর একটি উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন হিরন।
১৯৯৭ সালে ঐকমত্যের সরকারের শরীক দল জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ফলে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি’র বরিশাল বিভাগের নেতৃত্বে আসেন।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হিরণ যোগ দেন

আওয়ামী লীগে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং তা সক্রিয়ভাবে রাজপথে থেকে করেন। তাই যোগ্যতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নকে নতুন করে সাজান। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন।
হিরণ তাঁর নিজের কার্যক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টানা ৩৫ বছর পর বরিশাল নগর ভবনের নেতৃত্বে নিয়ে যান। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বিসিসি’র নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন।
এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ।
মৃত্যুঃ
২০১৪ সালের ২২ মার্চ, শনিবার রাত ১০টায় হিরণের বরিশাল ক্লাবের সামনে ব্রেন স্ট্রোক হয়। এর সাথে সাথেই তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং চেতনা হারিয়ে পড়েন। সাথে সাথেই তাঁকে শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রোববার তাঁর মস্তিষ্কে ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রানেকটমি’ নামে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপরে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী সোমবার রাতে হিরণকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের গ্লেনঈগলস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।সেখানকার চিকিৎসকেরা হিরণের বাঁচার সব আশা ছেড়ে দেয় এবং বাংলাদেশে এনে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরবর্তী বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় রাখা হয়।
অবশেষে ৯ই এপ্রিল, ২০১৪; বুধবার সকাল সাতটায় তিনি পরলোকগমন করেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর শোকবার্তায় বলেনঃ তার (হিরণ) মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিককে হারালো। বরিশালের উন্নয়নে হিরনের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। বরিশালের মানুষের জন্য তার ভালোবাসা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উন্নয়নের স্থপতি হিরনকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বরিশালের মানুষ মনে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বলেনঃ
এক সময়ের অবহেলিত বরিশাল শহরকে সাবেক মেয়র হিরন তার আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রাচ্যের ভেনিসে পরিণত করেছিলেন। বরিশালের উন্নয়নে তার ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। বরিশালের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো অকৃত্রিম। বরিশালের মানুষ তাকে চিরদিন গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে। হিরনের মৃত্যুতে বরিশাল হারিয়েছে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা রাজনীতিবিদকে, উন্নয়নের রূপকারকে। তিনি বলেন, হিরনের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন শক্তিশালী সংগঠককে, দেশ হারিয়েছে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিককে।
আজ তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই । কিন্তু তার করা মহৎ কাজ গুলো আজ ও মানুষের মনে নাড়া দেয় । মাঝে মাঝে মানুষ কে বলতে শুনি “আজ যদি হিরন মিঁয়া বেঁচে থাকতো , তাহলে বরিশাল স্বপ্নের নগরী হয়ে যেতো” ।
এটা শুধু বরিশাল বাসির জন্য আপসোস । কখনোই আর এমন নেত বরিশাল হয়তো জন্মাবে না ।
আল্লাহ যেনো তাকে জান্নাত বাসী করেন,এই দোয়াই করি ।

আরও খবর

Sponsered content